রাজশাহীতে প্রাণের কারখানায় ৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে
বরেন্দ্র অঞ্চলে সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি পুরোপুরি উৎপাদনে গেলে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে এখানে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশই হবে স্থানীয়।
আজ মঙ্গলবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার আমানতপুরে বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল এই তথ্য দেন। তিনি জানান, গোদাগাড়ীর কারখানায় মৌসুমি ফল-ফলাদি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার বাজারজাত করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে আগামীতে হিমায়িত খাদ্য (ফ্রোজেন ফুডস), নুডুলসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যও এখানে উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এ শিল্প গ্রুপের।
কামরুজ্জামান কামাল বলেন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মৌসুমভেদে এখন আম, টমেটো, জলপাই, পেয়ারাসহ কয়েকটি পণ্য সংগ্রহ ও পাল্পিং হচ্ছে। শিগগির তরমুজ, আনারস, শসা ও অ্যালোভেরার পাল্পিং শুরু হবে এখানে। তিনি বলেন, ‘প্রাণ গ্রুপের অন্যতম উদ্দেশ্য কৃষি পণ্যের সম্প্রসারণ ও কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। গোদাগাড়ীতে বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো, রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল কোনো ধরনের মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই তারা যেন স্বল্প পরিবহণ খরচে এখানে বিক্রি করতে পারে। এরই মধ্যে বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে স্বল্প পরিসরে আম, টমেটো, পেয়ারা ও জলপাই সংগ্রহের পাশাপাশি কমপোস্ট সার উৎপাদন হচ্ছে। এর সুফল পেতে শুরু করেছে স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ মানুষ। কেননা এসব কর্মকাণ্ডের ফলে কৃষকেরা কারখানায় পণ্য সরবরাহ শুরু করেছেন।
কামরুজ্জামান কামাল আরো বলেন, প্রাণ–আরএফএল গ্রুপ কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন, স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমরা এরই মধ্যে গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি। যদি গ্যাস সংযোগে ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পাই। তবে শিগগির গোদাগাড়ীর কারখানায় হিমায়িত খাদ্য, নুডুলস উৎপাদন হবে এবং এগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হবে। বর্তমানে কারখানায় মৌসুম ভেদে এক থেকে দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করছে। নতুন প্ল্যান্ট চালু করা গেলে স্থানীয়দের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এখানে।
সভায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) বলেন, ‘প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পণ্য এখন বিশ্বের ১৪১টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। আমরা গোদাগাড়ীতে কারখানা করেছি পণ্যের কাঁচামালের প্রাপ্যতার কথা চিন্তা করে। এখানে যদি গ্যাস সংযোগসহ বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়, তাহলে শুধু প্রাণ-আরএফএল নয়, আরো অনেক কোম্পানি কারখানা স্থাপনের আগ্রহ দেখাবে। এ বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি দরকার। এর ফলে এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে।
বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সারোয়ার হোসেন বলেন, একটা সময় দাম কম হওয়ার কারণে গোদাগাড়ীতে জমিতেই কৃষকের টমেটো নষ্ট হয়ে যেত। ২০১৮ সালের পর থেকে সেই পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। কৃষকরা এখন প্রকৃত দামে টমেটো বিক্রি করছে এবং এরই মধ্যে এই অঞ্চলে টমেটোর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা কারখানায় তরমুজ, আনারস, শসা ও অ্যালাভেরার পাল্পিং করার জন্য পরীক্ষামূলক কাজ করছি। ক্রেতারা যেন উৎকৃষ্ট মানের পণ্য পায়, সেজন্য আমরা পণ্যের কাঁচামালকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কারখানায় অত্যাধুনিক মেশিনে সম্পূর্ণ অ্যাসেপটিক পদ্ধতিতে পাল্পিং করা হয়। এখানে বর্জ্য দুটি অংশ বিভক্ত হয়ে খোসা থেকে জৈব সার ও আটি থেকে জ্বালানি তৈরি হওয়ায় কারখানাটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। কারখানার তরল বর্জ্যের জন্য বর্তমানে একটি ইটিপি রয়েছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (জনসংযোগ) তৌহিদুজ্জামান, ডেপুটি ম্যানেজার মাকছুদ-উল-ইসলাম জোয়ার্দ্দারসহ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর আমানতপুরে ১০২ বিঘা জমির ওপর বরেন্দ্র ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তোলে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এ গ্রুপের ১৬ স্থানে বিভিন্ন কারখানায় এক লাখ ১০ হাজার লোক কাজ করছে। প্রাণ-আরএফএলের পণ্যের গুণগতমান খুবই ভালো বলেই দেশের ১৪১টি দেশে এখন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে অন্যান্য দেশগুলোতেও প্রাণ-আরএফএলের পণ্য রপ্তানি করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।