পাবনায় বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম, নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং টিম
পাবনায় প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এদিকে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাবনা জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম বাজার মনিটরিং করতে মাঠে নেমেছে। তবে পেঁয়াজের মূল্য যেন পাগলা ঘোড়ার মতো দৌড়ে বেড়াচ্ছে।
পাবনার বড় বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু বলেন, ‘আজ বুধবার সুজানগর উপজেলার পৌর বাজারে পাইকারি দরে পেঁয়াজ কিনতে গিয়েছিলাম। সকাল ১০টার দিকে ছয় মণ পেঁয়াজ কিনেছি তিন হাজার টাকা দরে। বেলা ১১টার দিকে দুই মণ কিনেছি ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে, দুপুর ১২টায় এক মণ কিনেছি ৩৩০০ টাকা মণ দরে। এখন প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।’
সূত্র জানায়, পাবনার বড় বাজারে মোট ১০ থেকে ১২ জন পেঁয়াজের বড় ব্যবসায়ী বা আড়তদার রয়েছে।
এদের মধ্যে মুন্না মানিক ভাণ্ডারের মালিক মো. আব্দুল গফুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা বাজারে কোনো দাম বাড়াই না বা কোনো মজুদ করি না। আমরা প্রতিদিন সকালে সাঁথিয়া অথবা সুজানগরের হাটে গিয়ে পেঁয়াজ কিনি। পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে সামান্য লাভে পাবনায় এনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। আমরা বেশি দামে কিনলে কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে সাত টাকা লাভ রেখে বিক্রি করি।’
প্রান্ত ট্রেডার্সের মালিক মো. ইউনুছ আলী বলেন, ‘আমাদের কোনো দোষ নাই। দাম বাড়ানো এবং মজুদের জন্য দায়ী বড় বড় কৃষক এবং ঢাকার বড় বড় ব্যবসায়ী। তারা ফোনে তাদের নিয়োজিত পাইকারদের যে দামে কিনতে বলে তারা সেই দামের কমে বা বেশিতে কেনাবেচা করে না।’
পাবনা জেলা প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানায়, পাবনা জেলার সুজানগর, সাঁথিয়া, বেড়া, আতাইকুলা ও শহরের বেশ কিছু বড় বড় কৃষক এবং মজুদদার তাদের নিজেদের বাড়িতে অথবা ব্যক্তিগত গুদামে শত শত মণ পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছে। ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে’ এ রকম খবর প্রচারিত হওয়ার দিন থেকে এই চক্র তাদের মজুদকৃত পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি করতে বাজারে ছাড়ছে না।
এদিকে, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে পাবনা জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম বাজার মনিটরিং করতে মাঠে নেমেছেন। আজ সকালে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়নাল আবেদীন নেতৃত্বে এবং পরে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোখসানা মিতার নেতৃত্বে পাবনার বড় বাজার, লাইব্রেরি বাজার, মাছুমবাজার, অনন্তবাজার, সিংগাবাজারসহ কয়েকটি বাজারে অভিযান পরিচালনা করে। এ ছাড়া পাবনার সুজানগরে আড়তদার, মজুদদার, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেছেন জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম।
সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোখসানা মিতা বলেন, ‘বাজার মনিটর করে দেখা গেছে পাইকার বা আড়তদাররা আজ ৩২০০ টাকা থেকে ৩৩০০ টাকা দরে পাবনার বিভিন্ন হাট ও বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনেছে। তারা পরিবহন খরচ বাদে ৩৫০০ থেকে ৩৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছে।’
পাবনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত দুই দিনে শুধু গুজবের ওপর ভিত্তি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। দেশে কৃষকের ঘরে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। এরপরেও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে কারো কারসাজি থাকলে তা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’