গুজবে বেড়েছে লবণ বিক্রি, বাড়েনি দাম
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা। রাজধানীর কারওয়ানবাজারে ঢুকতেই চোখে পড়ল কয়েকজন ক্রেতা পলিথিন ব্যাগে ভরে লবণ নিয়ে ফিরছেন। একেকজনের কাছে অন্তত তিন কেজি করে লবণ। অথচ লবণের দাম আগের মতোই আছে, বাড়েনি একটুও।
জানতে চাইলে শাহীন নামের একজন বললেন, ‘সিন্ডিকেটের বাংলাদেশ’, কাল যদি লবণের দাম ১০০ হয়ে যায়? তাই কিনে রাখছি।’
লবণ নিয়ে ফেরা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা শেষ হলে কারওয়ানবাজারের হাজি মিজান এন্টারপ্রাইজের মুদি দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখা যায়, অন্তত ৩০ জন দাঁড়িয়ে আছে, তারা লবণ কিনবে। ‘আমাকে দেন, দ্রুত দেন’ বলে হইচই করছে তারা।
দোকানের মালিক মিজানুর রহমান জানিয়েছে, দুপুর একটা থেকে তিনি কমপক্ষে ৪০০ কেজি লবণ বিক্রি করেছেন। তারপরও লবণ দিয়ে আর পারছেন না তিনি। দ্রুত লবণ পেতে মরিয়া হয়ে উঠা ক্রেতারা একপর্যায়ে টানা হেঁচড়া শুরু করে দেয়। ওই সময় বিরক্ত হয়ে মিজানুর রহমান বলে উঠলেন, ‘আর লবণ নেই। বিক্রি বন্ধ। আপনারা চলে যান। শুধু লবণ আর লবণ! আর কিছু কেনার নেই আপনাদের?’
বিরক্ত হয়ে দোকানদার মিজান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আর পারছি না ভাই। কে যে গুজব ছড়াল। দাম কিন্তু এক টাকাও বাড়েনি। আগের দামেই আছে। তবে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক বিক্রেতা বেশি দাম রাখছে।’
মিজান আরো বলেন, ‘দুপুর একটা থেকে কে যেন গুজব ছড়িয়েছে, তারপর থেকে এই অবস্থা। এখনো পর্যন্ত অন্তত ৪০০ কেজি লবণ বিক্রি করেছি। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আজ হাজার বস্তা লবণ থাকলেও বিক্রি হয়ে যাবে। মেজাজ খারাপ হওয়ার আরো কারণ হচ্ছে, কেউ লবণ ছাড়া আর কিছু কিনছেন না। অন্যদিন অনেক কিছুর সঙ্গে লবণ কেনে ক্রেতারা। আর আজ লবণের সঙ্গে অন্য কিছুও কিনছেন না।’
পাশের এক দোকানেও গিয়ে দেখা যায় লবণ ক্রেতাদের ভিড়। তাঁদের ভেতরে একজন বলেন, ‘শুনেছি লবণ ২০০ টাকা হবে। দাম বাড়ার আগে কিনে রাখি।’ পাশ থেকে রউফ নামের দোকানি বলে উঠলেন, ‘ভাই এসব গুজব। বাড়ি চলে যান। কালও একই দাম পাবেন।’
তবে লবণের গুজবকে কেন্দ্র করে তৎপর আছে পুলিশ। বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের সচেতন করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয় থেকে সব থানায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী বাজার মনিটরিংও করছে থানার পুলিশ। এসব বিষয়ে ডিএমপির একাধিক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তেজগাঁও থানার ওসি শামীম অর রশীদ তালুকদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সব থানায় নির্দেশনা দিয়েছেন বাজার মনিটরিং করতে। নির্দেশনা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি কারওয়ানবাজার গিয়ে মাইকিং করেছি। যাতে কেউ গুজবে কান না দেয়। বাজারে গিয়ে দেখি, দাম একটুও বাড়েনি। তবে ক্রেতা প্রচুর। মানুষ এত বোকা মাইকিং করার পরও ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।’
মোহাম্মদপুর থানায় ওসি জি বি বিশ্বাস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ডিএমপির নির্দেশনার পর পরই আমরা বাজার ঘুরে দেখেছি। এখন মার্কেটে দুজন এসিল্যান্ডের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর পুলিশ বাজার মনিটরিং করছেন। বেশি দামে বিক্রি করার জন্য দুজন বিক্রেতাকে আমরা থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’