কমছে পেঁয়াজের দাম, ঘুমাচ্ছেন বিক্রেতারা
পেঁয়াজের বাজারে একদিকে বিক্রি নেই, অন্যদিকে সীমান্তে আটকে থাকা দুই হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত। এতেই একদিনে বাজারে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। কেজি প্রতি কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। এদিকে দাম আরো কমার আশায় প্রায় ক্রেতা শূন্য রয়েছে পেঁয়াজের বাজার।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি বিক্রেতারা দোকান খুলে কেউ বসে আছেন, কেউবা অলসভাবে ঘুমাচ্ছেন।
ফারুক নামের এক পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ক্রেতা নেই। তাই অলস সময় কাটছে।’ তিনি জানান, ক্রেতা না থাকায় পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। এখন মান অনুযায়ী কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।’
পাশের পাইকারি দোকানদার একেএম আজাদ পেঁয়াজের দোকানে ঘুমাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘পাইকারি বাজারে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।’
ক্রেতারা জানালেন, দাম যেহেতু আর বাড়ছে না, তাই বেশি পেঁয়াজ কিনে মজুদ করার দরকার নেই।
তবে ফজলুল করিম নামের এক ক্রেতা জানালেন, তিনি পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রথম দিন সাত কেজি কিনেছিলেন। ফলে তাঁর এখন আর দরকার হচ্ছে না।
কারওয়ান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আবদুল হামিদ তাঁর দোকানে ঘুমাচ্ছিলেন। জানতে চাইলে পাশ থেকে নাজমুল নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘ক্রেতা নেই, তাই হামিদ ভাই ঘুমাচ্ছেন।’ নাজমুলও পেঁয়াজের বস্তায় হেলান দিয়ে বসে ছিলেন।
আসাদুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা তিন কেজি পেঁয়াজ কেনেন। বললেন, ‘আমি সাধারণত তিন থেকে পাঁচ কেজি করে পেঁয়াজ কিনি। কারওয়ান বাজার এলেই সবকিছু বেশি করে কিনি। কারণ, এখানে নিয়মিত আসার সুযোগ হয় না। আজ ৮০ টাকা করে পেঁয়াজ কিনলাম।’
আসাদুল পেঁয়াজ কেনেন ছবুর হোসেনের কাছ থেকে। ছবুর বলেন, ‘সারা দিনে ১৫ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছি। কাল থেকে বিক্রি একেবারে কমে গেছে। অথচ, অন্য সময়ও অন্তত এক বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি হয়। মনে হচ্ছে দাম আরো কমবে।’
ছবুরের পাশে বসে পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন নাইম নামের এক বিক্রেতা। তিনি বললেন, ‘ব্যবসা ভালো না। সেই করোনা আসার পর থেকে সব মিলিয়ে খুব বাজে অবস্থা। যা কামাই করি তার একটি টাকাও জমানো যায় না। শুধু খাওয়াটা লাভ।’
কামাল হোসেন তরকারি কিনছিলেন। সে সময় তিনি বলেন, ‘সেদিন দুই কেজি পেঁয়াজ কিনেছিলাম। এখনো শেষ হয়নি। আর দাম যেহেতু বাড়ছে না সেহেতু জমিয়ে রাখার কিছু নেই। শেষ হলে পরে আবার কিনব।’
এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর হুট করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে ওই দিন থেকে লাগামহীন হয়ে পড়ে পেঁয়াজের বাজার। দেশি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে ১১০ টাকা পর্যন্ত দাঁড়ায়। আরো দাম বৃদ্ধির আশঙ্কায় লোকজন অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনে মজুদ করে রাখে। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেন। প্রায় তিন মাস পর গতকাল শুক্রবার মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়। ২০ টন পেঁয়াজ নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে পৌঁছায় মিয়ানমারের একটি ট্রলার।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার থেকে ক্রেতা সংকট দেখা দেয় পেঁয়াজের বাজারে। যার প্রভাবে পাইকারি বাজারে কমতে থাকে পেঁয়াজের দাম। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দফায় দাম কমে পাইকারিতে পেঁয়াজের কেজি ৭৭ টাকায় নামে। তবে এ পরিস্থিতিতে সংবাদ আসে, নিষেধাজ্ঞার আগে রপ্তানির অনুমতি পাওয়া ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ বাংলাদেশকে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ভারত। এতেই দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পেঁয়াজের দাম আরো কমে গেল।