এই বাজেট কোনো বাজেটই না : আবুল বারকাত
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেছেন, ‘প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার হওয়া উচিত ছিল আরো বিশাল। নতুবা আপনি করোনাপরবর্তী সময়ে সামাল দিতে পারবেন না। সুতরাং পরিস্থিতি বিবেচনায় এই বাজেট কোনো বাজেটই না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার পর এনটিভি অনলাইনকে এসব কথা বলেন আবুল বারকাত।
অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, ‘করোনাকালে দেশে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। বেকারত্বের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, আরো বাড়বে। নতুন করে অনেক দরিদ্র লোকের সংখ্যা বেড়েছে। এটা অশনিসংকেত। সমাজে মানুষে মানুষে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে। এ ছাড়া করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় আমাদের এই বাজেটের আকার আরো বড় হতে পারত। সুতরাং পরিস্থিতি বিবেচনায় এই বাজেট কোনো বাজেটই না। এই বাজেটের আকার হওয়া উচিত ছিল আরো বিশাল। নতুবা আপনি করোনাপরবর্তী সময়ে সামাল দিতে পারবেন না।’
আবুল বারকাত বলেন, ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির পক্ষ থেকে গত ছয় বছরে একটি প্রস্তাবিত বাজেট দেওয়া হয়। এবারও আমরা সরকারকে একটি প্রস্তাবিত বাজেট দিয়েছি। সেখানে মোট প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ১৩ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। করোনাপরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা, সমাজে তৈরি হওয়া অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরসহ মুজিববর্ষের কথা ভেবে আমরা সমিতির পক্ষ থেকে ১৬০ পৃষ্ঠার একটি প্রস্তাবিত বাজেট দিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিকে সরকার খেয়ালই দিল না। এই বাজেট কোনো বাজেট না।’
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এতে ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী ঘাটতি বাজেটের বিষয়ে তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬.০ শতাংশ। এটি গত বাজেটে ছিল ৫.০ শতাংশ। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস থেকে ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ নয় হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা হবে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে আসবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় গত বছরের বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি ধরা হয়েছে। বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার তিন কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে সরকার প্রতিশ্রুত বৈদেশিক অনুদান পাবে চার হাজার ১৩ কোটি টাকা। সরকারের মোট আয় হবে তিন লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের বাইরের খাত থেকে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া কর ছাড়া রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে দুই লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হচ্ছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে চার হাজার ৭২২ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত নয় এবং নিজস্ব উৎসের রাজস্ব থেকে অর্থায়নকৃত উন্নয়নমূলক কর্মসূচি তথা স্কিম বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে দুই হাজার ৫২২ কোটি টাকা। এ ছাড়া এডিপিবহির্ভূত কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে দুই হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।