বেরোবি শিক্ষকের গ্রেপ্তার নিয়ে বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহা. মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, গবেষক ও উন্নয়নকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি এবং এই ঘটনার স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী তদন্তের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
আজ শুক্রবার (২০ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই, প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত একটি মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে দ্রুত আদালতে পাঠানো হয়। জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চর্চায় একধরনের ভীতিকর ও অনিশ্চয়তার পরিবেশ সৃষ্টি করার মতো। এটি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় কাম্য নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া থেকে জানা গেছে, রংপুরের হাজীরহাট এলাকার বাসিন্দা ছমেস উদ্দিন ২০২৪ সালের ২ আগস্ট পুলিশ দেখে পালানোর সময় স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন, যা প্রত্যক্ষদর্শী ও খোদ সরকারি প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। ঘটনার প্রায় ১০ মাস পর একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার করাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন বিবৃতিদাতারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই মামলার বাদী নিজেই গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘পুলিশ তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছে বটে-কিন্তু তিনি জানেন না, মামলায় কে কে আসামি।’ এজাহার ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের মধ্যে স্পষ্ট অমিল লক্ষ্য করা গেছে। মৃত্যুর পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই ছমেস উদ্দিনকে দাফন করা হয়। এমন একটি ঘটনায় একজন শিক্ষককে আসামি করা বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে বলে তারা মনে করেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী আবু সাইদের হত্যার পর মাহমুদুল হকই ছিলেন প্রথম শিক্ষক, যিনি পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান অনিয়ম, দুর্নীতি এবং দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে তিনি সরব ছিলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, মাহমুদুল হক কেবল একজন শিক্ষকই নন, তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্য, দৈনিক ডেইলি স্টারের সাবেক মেট্রো এডিটর, ইউএনবির সাবেক সাব-এডিটর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
বিবৃতি প্রদানকারী শিক্ষক সমাজ, সাংবাদিক, গবেষক, উন্নয়নকর্মী ও বিভিন্ন পেশার দায়িত্বশীল নাগরিকবৃন্দ মনে করেন, এই প্রহসনমূলক গ্রেপ্তার শুধুমাত্র একটি হয়রানির অংশ। তারা মাহমুদুল হকের অবিলম্বে মুক্তি, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং এই ঘটনার স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিচারিক তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিবৃতি প্রদানকারীরা হলেন- আ-আল মামুন (শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), মাহফুজ মিশু (বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টিভি), শাতিল সিরাজ (শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), সুশান্ত সিনহা (বিশেষ প্রতিনিধি, একাত্তর টেলিভিশন), তাসনীম হুমাইদা (শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর), ড. মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুল (সভাপতি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), মু. আতিকুর রহমান (সহ-সম্পাদক, দৈনিক মানবকণ্ঠ), আইনুদ সনি (সিনিয়র ম্যানেজার - জেন্ডার এন্ড সোশ্যাল ইন্টারভেনশন, কটনকানেক্ট), এনায়েত করিম (রাজশাহী ব্যুরো, দৈনিক খবরের কাগজ), আরাফাত রহমান (স্টাফ রিপোর্টার, দ্য ডেইলি স্টার), সোমা দেব (শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), মো. মামুন আ. কাইউম (পিএইচডি গবেষক, কুইন্সল্যাজণ্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, অস্ট্রেলিয়া), দীন মোহাম্মদ শিবলী (প্রিন্সিপাল, ছায়া ইনস্টিটিউট অফ কমিউনিকেশন অ্যান্ড ফটোগ্রাফি), মো ফেরদাউস মোবারক (বার্তা সম্পাদক, টাইমস অব বাংলাদেশ)।
আরও রয়েছেন- কাজী মামুন হায়দার (শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), রেজাউল করিম শামীম (সহ-সম্পাদক, দৈনিক কালবেলা), মুসা বিন মোহাম্মদ (সহ সম্পাদক, দৈনিক মানবকণ্ঠ), শিহাবুল ইসলাম (সহ-সম্পাদক, সমকাল), তৌসিফ কাইয়ুম (স্টাফ রিপোর্টার, টিবিএস), মো. ওমর ফারুক (স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকাপ্রকাশ), আরাফাত রহমান (স্টাফ রিপোর্টার, দ্য ডেইলি স্টার), ইয়াজিম পলাশ (সহ-সম্পাদক, সমকাল), এস এম মহিউদ্দিন (জনসংযোগ কর্মকর্তা, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়), মুস্তাফিজ রনি (শিক্ষক, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি খুলনা), খায়রুল আলম (নেতা, সাংবাদিক ইউনিয়ন), আবু তাহের (ডেপুটি চিফ রিপোর্টার, বণিক বার্তা), হাসান মিসবাহ (সিনিয়র রিপোর্টার, যমুনা টেলিভিশন), রাফিউল ইসলাম (নির্বাহী প্রযোজক, সময় টেলিভিশন), এফএইচএম হুমায়ন কবীর (বিশেষ সংবাদদাতা, দি ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস), ইয়াসির আরাফাত (প্রযুক্তি বিভাগের প্রধান, মেটাল স্টুডিও প্রাইভেট লিমিটেড, ঢাকা), মোহাম্মদ সোহেল (ফ্যাক্টচেকার, রিউমার স্ক্যানার, বাংলাদেশ), মমিনুর মমিন (সহ-সম্পাদক, দৈনিক আমাদের সময়), জাহাঙ্গীর আলম (সিনিয়র রিপোর্টার, খবরের কাগজ), ওবায়দুর রহমান (সিনিয়র সাব-এডিটর, সমকাল), আমজাদ হোসেন শিমুল (রাজশাহী ব্যুরোপ্রধান, দৈনিক কালবেলা), অপূর্ব কুমার পিকে (সিনিয়র কূটনৈতিক রিপোর্টার, সারাবাংলা ডট নেট), মো. মেহেদী হাসান (জনসংযোগ কর্মকর্তা, লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া), গোলাম রাব্বানী (শিক্ষক ও মিডিয়া অ্যাডভাইজার, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়)।