নাটোরে নানা জাতের আমের ফলন, দামও নাগালের মধ্যে

চলছে ফলের মৌসুম। উত্তরাঞ্চলের জেলা নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁর বাগানজুড়ে এখন আমের মৌসুমি উৎসব। এসব জেলার মধ্যে বৈচিত্র্যময় আমের ফলনে নাটোর বিশেষভাবে এগিয়ে রয়েছে। প্রচলিত জাতের পাশাপাশি নানা দেশি-বিদেশি ও গবেষণাভিত্তিক জাতের আম উৎপাদন করে নাটোরের কৃষকেরা পেয়েছেন আলাদা পরিচিতি।
রাষ্ট্রীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত নাটোরের ফলচাষি সেলিম রেজা বলেন, বর্তমানে বাজারে রয়েছে জনপ্রিয় গোপালভোগ বা কালুয়া, ল্যাংড়া, মোহনভোগ, লক্ষণভোগ, খিরসাপাত, রানীপছন্দ, মল্লিকা প্রভৃতি মৌসুমি জাত। অদূর ভবিষ্যতে বাজারে আসবে আম্রপালি, নাগ ফজলি, সুরমা ফজলি ও মহারাজ ফজলির মতো জাতগুলো। এসব আমের সুবাস ও স্বাদে মুগ্ধ ক্রেতারা।
নাটোরের গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের হাটবাজার পর্যন্ত আমে ঠাসা। দামও তুলনামূলকভাবে সহনীয়। হাটবাজারগুলোতে আমের কেজি ১৫ টাকা থেকে শুরু করে মান ও জাতভেদে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। জেলার প্রধান দুটি আম মোকাম বড়াইগ্রামের আহম্মদপুর ও বাগাতিপাড়ার তমালতলার আড়তে এখন প্রতিদিন শত শত মণ আম উঠছে।
সেলিম রেজা আরও বলেন, নাটোরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে দেশীয় ও বিদেশি নানা জাতের উন্নতমানের আম। এর মধ্যে রয়েছে কাটিমন, বান্দিকুড়ি, কিউজাই, তোতাপুরি, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, বিশাল আকারের নাস-১, নাস-২, নাস-৩ (রঙিন), কেজি সাইজের গোলাকৃতির নাস-৪ এবং বছরে দুবার ফল দেওয়া নাস-৫ জাতের আম।
এছাড়া ভারতীয় জাতের অরুণিকা, অরুণিমা, হ্যামিলটন, অর্কনীলাচল, অম্বিকা; যুক্তরাষ্ট্রের ক্যান্ট, কেইট ও অস্টিন; থাইল্যান্ডের রেড পালমার এবং দেশীয় গবেষণায় উদ্ভাবিত গৌরমতি ও বারি-৪ জাতের আমও এখন নাটোরে চাষ হচ্ছে। এসব আম মূলত লেট ভ্যারাইটি, অর্থাৎ বিলম্বিত জাতের। আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া যায় এ আমগুলো। দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় মূলত রাজধানীর সুপারশপ ও অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া জেলায় সীমিত পরিসরে আশ্বিনা জাতের আমের চাষও রয়েছে।
তমালতলা আড়তের ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসেন, লালন আলী ও মোশাররফ হোসেন বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০টি ট্রাক আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। তবে তুলনামূলকভাবে বড় হওয়ায় আহম্মদপুর মোকাম থেকে আম যাচ্ছে আরও বেশি পরিমাণে। মোকাম পর্যায়ে প্রতি মণ আম বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা দরে।
জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান খান বলেন, চলতি মৌসুমে নাটোর জেলায় প্রায় ৭৩ হাজার টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও মৌসুমের শুরুতে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে কিছু আম ঝরে গেছে, তবে সামগ্রিকভাবে ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে আমের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং দামও সাধারণ ভোক্তার নাগালের মধ্যে রয়েছে।