ব্রহ্মপুত্রে বাড়ছে পানি
ফুলছড়িতে ভাঙনের মুখে ৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙনের কবলে পড়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে স্থানীয়রা। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে পড়েছে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অবকাঠামোও।
উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া থেকে কটিয়ারভিটা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ইতোমধ্যে কটিয়ারভিটা, উত্তর উড়িয়া, কালাসোনা, জোড়াবাড়ি ও কাবিলপুর গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একইভাবে ফুলছড়ি, ফজলুপুর ও এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকাও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কটিয়ারভিটা গ্রামে নদীভাঙনের কারণে মানুষ ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভয়াবহ ভাঙন শুরু হলেও এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
ভাঙনের কবলে পড়েছে কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর উড়িয়া কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দাড়িয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিপি রাণী বলেন, ‘বিদ্যালয়টি নদী থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে। প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হচ্ছে। নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে যেকোনো সময় বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যেতে পারে।’
কটিয়ারভিটা গ্রামের বাসিন্দা বিন্দু রাণী বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে ১০টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে চলে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এবার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, আমরাও ঘর হারাব।’
স্থানীয় নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা এলেই আতঙ্ক দেখা দেয়। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেগও বাড়ে। কিন্তু কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায় না।’
উড়িয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মাওলানা আবুল খায়ের বলেন, ‘প্রতি বছর ভাঙন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাঠে নামে। কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান হয় না। এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে মানুষ আরও বড় বিপদের মুখে পড়বে।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। উত্তর উড়িয়া থেকে কটিয়ারভিটা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত ভাঙনরোধে কার্যক্রম শুরু করা হবে।’