বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে ভারত : রিজভী

শেখ হাসিনাকে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ কথা বলার সুযোগ দিয়ে ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপরে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্মসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে একটি গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে রিজভী এ মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ওপর লেখা জিএম রাজিব হোসেনের ‘দ্রোহের গ্রাফিতি’ গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারত তাকে (শেখ হাসিনা) আশ্রয় দিয়েছে সেটা দিতে পারে। কিন্তু তাকে ফ্রি হ্যান্ড দেওয়া, সে বলবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে… পার্শ্ববর্তী দেশে থেকে উনি উসকানি দিচ্ছেন, একটা অরাজকতা তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং তাকে সাপোর্ট করছে ভারতের পলিসি মেকাররা। এটা অদ্ভুত ব্যাপার।
রিজভী আরও বলেন, এটা তো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ, ভয়ংকর রকমের হস্তক্ষেপ। এটা একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ওপরে আরেকটি রাষ্ট্রের এরকম অবস্থান। এটা চরমভাবে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে এই কাজটা করছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্মসচিব বলেন, আমার অবাক লাগে যে, ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে এমন নির্লজ্জের মতো ওখানকার মিডিয়া, কিছু সাংবাদিক সেই এক ধরনের বয়ান তৈরি করছে... শেখ হাসিনা যেমনটি করেছেন… সেই ফ্যাসিস্টদের পক্ষ অবলম্বন করে এই বয়ান তৈরি করছে। তাতে মনে হচ্ছে যে, অনেক দিনের গুপ্তধন তারা যেটা সঞ্চয় করেছে সেই গুপ্ত ধন যেন হাতছাড়া হয়ে গেছে।
রিজভী বলেন, আজকে গণতন্ত্রের পথরেখা অনুযায়ী গণতন্ত্রের চর্চা-অনুশীলন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের যে বিকাশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এটা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছে না শুধু শেখ হাসিনাই নয়, ভারতের পলিসি মেকাররাও। এটা কেনো? একটি গণতান্ত্রিক দেশের কাছ থেকে তো এটা আমরা আশা করতে পারি না।
প্র্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, তাদের (ভারতের) কেউ কেউ খাপছাড়া টাইপের কিছু মানুষ তারা বলছেন যে, বাংলাদেশ আর থাকবে না। পার্শ্ববর্তী একটি স্বাধীন দেশ সেটা থাকবে না সেই কথাটা অ্যালাউ করছে কি করে ভারতের নীতিনির্ধারকরা?
‘প্রতিবিপ্লবের বিরুদ্ধে সজাগ থাকুন’ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আমাদেরও সবাইকে গণতান্ত্রিক শক্তির স্বপক্ষের লোকদেরকে সতর্ক পদক্ষেপ রাখতে হবে। কোনো নৈরাজ্যের কারণে কেউ যাতে কোনো সুযোগ না নিতে পারে….এটাও মনে রাখতে হবে প্রতিবিপ্লব উঁকিঝুঁকি মারে সবসময়… এই উঁকিঝুঁকি যাতে দিতে না পারে।
রিজভী আরও বলেন, আমাদের কাছে তো দৃষ্টান্ত আছে। আমরা ব্রিটেনের বিপ্লব দেখেছি সেখানে রাজা চালর্সের ছেলে আবার সে রাজা হয়ে এসেছে শুধু কিছু ভুলের কারণে, ফ্রান্সের যে বিপ্লব হলো লুই সিক্সটিন গিলোটানাইজড হলো, তার ছেলেও একবার প্রত্যাবর্তন করেছিল শুধু ভুলের কারণে। আমাদের কাছে বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিপ্লবের পরবর্তী যে ভুলগুলো সেটা যেন না হয়… সেটা দেখলে পরে আর কখনো প্রতিবিপ্লব হবে না।
রিজভী বলেন, আমরা গণতন্ত্রের রাস্তায় দিয়ে এগিয়ে যাব। আমরা দেশবিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী এবং আমাদের সার্বভৌমত্ব বিরোধী… আমাদের ইতিহাস-সংস্কৃতি আবহমান বাংলার যা কিছু আছে সেটার চর্চা-অনুশীলন এবং সেটিকে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কখনোই অন্যের হস্তক্ষেপকে মেনে নেবে না। এভাবেই এগোতে হবে। আমাদের যে পরিবর্তন এটাকে নানা কাজের মধ্য দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, ‘আমার দেশ’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সরগম পত্রিকার সম্পাদক কাজী রওনক হোসেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, লেখক জিএম রাজিব হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।