কাজের খোঁজে ঘর ছাড়ছে সাতক্ষীরার মানুষ
আজ ২৫ মে, দেশের দক্ষিণ উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতের ছয় বছর পূর্তি। ২০০৯ সালের এই দিনে ভয়ংকর আইলার জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দেশের দক্ষিণ জনপদ। নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় শত শত বাড়িঘর। বেড়িবাঁধ ধসে একাকার হয়ে যায় পানিতে। মাত্র ত্রিশ মিনিটের এই দানব কেড়ে নিয়েছিল সাতক্ষীরার গাবুরা ও পদ্মপুকুরের ৩৬টি গ্রামের ৭৩ প্রাণ।
গৃহহীন হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নেয় উঁচু সড়কের ওপর। দুই বছর ধরে সড়কে থাকার পর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও কাজের খোঁজে মানুষ চলে যায় এলাকা ছেড়ে। সে অবস্থার উন্নতি হয়নি এখনও ।
আইলার আঘাতের ছয় বছর পরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুরের দুর্গত মানুষ। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এসব মানুষ নতুন বাড়িঘর পেয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ও রাস্তা নির্মিত হলেও এলাকায় কৃষি নেই। চিংড়ি চাষেও যাচ্ছে মন্দা। কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় গ্রাম ছাড়ছেন কর্মক্ষম মানুষেরা।
এ কথাই জানান শ্যামনগর উপজেলার খুটিকাটা গ্রামের চিংড়িচাষী মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আইলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। দীর্ঘদিন মাছের চাষ করতে পারিনি। তারপর যখন শুরু করি ভাইরাস দেখা দেওয়ায় উৎপাদনে ক্ষতি হয়। ফলে অনেক ঋণ হয়। মজুরি না পেয়ে লোকজন চলে যাচ্ছে অন্য জায়গায়।’
আইলায় ধসে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে । চিংড়ি চাষ বন্ধ হয়ে গেলেও তা পুনরায় শুরু হয়েছে। তবে কৃষি জমি না থাকায় কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দিয়েছে।
পদ্মপুকুরের ইয়াকুব আলী বলেন, ‘বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু সে বাঁধ যে কতক্ষণ টিকবে সেই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে সর্বক্ষণ আমাদের বসবাস করতে হয়। কৃষিজমি নাই, চিংড়ি চাষ করে জীবন নির্বাহ করতে হয়। তবে যারা দিনমজুর তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করছে।’
আইলা উপদ্রুত এলাকায় নেই কোন হাসপাতাল, ক্লিনিক। কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় চিকিৎসা সংকটে রয়েছেন এসব মানুষ। এলাকাজুড়ে রয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। রেশনিংয়ের মাধ্যমে কিছু পরিবার পানি পেলেও অনেকেই এখনও নির্ভরশীল পুকুরের পানির ওপর। খাবার পানির জন্য পুকুর খননের কাজ চলছে এ এলাকায়।
পাখিমারা গ্রামের মোমেনা খাতুন বলেন, ‘এখানে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডাক্তার নাই। বেসরকারি গণমুখী স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নিয়মিত ডাক্তার আসে।’
সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরা ও পদ্মপুকুরের মানুষ নদীতে মাছ ও মাছের পোনা ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। বনের কাঠ কেটেও সংসার চলতো তাদের। এখন তাও বন্ধ।
ডুমুরিয়ার জেলে ও বনকর্মী ফজর আলী বলেন, ‘আগে বনে যেতাম। মাছ ধরতাম। এখন তা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
সুন্দরবনে গোলপাতা কেটে জীবিকা নির্বাহ হয় বছরের দুই মৌসুমে। কিন্তু অন্য সময় বেকার থাকতে হয়। কিছু লোক চুরি করে কাঠ কাটলেও, সবাই তা করে না। নোনা পানি ও নোনা মাটির এ এলাকার পরিবেশও বিপন্ন হওয়ায় গাছপালা জন্মায়না। গড়কুমারপুরের রওশন আলী জানালেন কষ্টের কথা। কাজ না পেয়ে বাড়িতে বসেই কাটাতে হয় দিনকাল।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ দুটি ইউনিয়ন গাবুরা ও পদ্মপুকুরে চলমান নানা সমস্যার কথা স্বীকার করলেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম । সেই সাথে তিনি কর্মসংস্থান ও পানি সংকট নিয়ে শোনালেন আশার কথা ।
তিনি বলেন, ‘এলাকার মানুষ কৃষি, প্রাণিসম্পদ ব্যবহার করে তাদের কর্মসংস্থান ও দুর্যোগে সহনশীলতার সক্ষমতা অর্জন করতে কাজ করছে। সরকারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও কাজ করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘১৯৬০ সালে বাঁধ হওয়ার পর সেসব বাঁধ তেমনভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।’ তিনি আরও জানান, এসব এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা আছে।’