তদবির ঠেকাতে মন্ত্রণালয়ে ‘তালা থেরাপি’
সচিবালয়ের দুই নম্বর ভবনের চতুর্থ তলায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কার্যালয়। মূল ভবন থেকে মন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশের পথটি কিছুদিন ধরে কলাপসিবল গেট দিয়ে আটকানো। কলাপসিবল গেটটিতে সব সময় একটি বড় তালা ঝুলছে। কয়েকজন পুলিশ সার্বক্ষণিক এ গেটের পাহারায় নিয়োজিত আছেন। তালাবদ্ধ গেটটির বাইরে গিজগিজ করছে মন্ত্রীর দপ্তরে বিভিন্ন তদবির নিয়ে আসা লোকজন।
মন্ত্রীর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানালেন, তদবিরবাজদের সামলাতেই এসবের আয়োজন!
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রবেশপথটি তালা দিয়ে আটকানো। ভেতরে তিনজন পুলিশ কনস্টেবল পাহারা দিচ্ছেন। গেটের বাইরে মূল ভবনের বারান্দা ও ১ নম্বর ভবনে যাওয়ার করিডরে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েক শ মানুষ। এরা সবাই বিভিন্ন কাজ নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন।
‘তালা থেরাপি’র বিষয়ে গেটে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতেই এখানে আমাদের নিয়োজিত করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কথা কেউ শোনে না। সবাই ধাক্কা দিয়ে ভেতরে চলে যায়। বকাঝকা করে। এ কারণেই স্যারদের পরামর্শে তালা লাগিয়ে দিয়েছি।’
মন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই পুলিশ সদস্য বলেন, ‘চাবি আমাদের কাছে নেই। ভেতরে একজন স্যারের কাছে চাবি। আমাদের ওপর নির্দেশ হচ্ছে যে, এ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছাড়া শুধু এমপি স্যাররা এলে অনুমতি ছাড়াই চাবি এনে তালা খুলে তাঁদের প্রবেশ করতে দেব। আবার সঙ্গে সঙ্গে তালা বন্ধ করে চাবি আগের জায়গায় রেখে আসব। এ ছাড়া অন্য কেউ এলে তিনি যাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন, আমরা গিয়ে তাঁর অনুমতি চাব। তিনি অনুমতি দিলে চাবি এনে তালা খুলে দেব।’ তিনি আরো বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তাঁর স্লিপ বা ভিজিটিং কার্ড পিও সাহেবের কাছে দেই। পিও সাহেব সেটা মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে দেন। ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পেলেই তালা খুলে তাঁকে প্রবেশ করতে দেই। এ ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।’
যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জনসংযোগ কর্মকর্তা পরীক্ষিত চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয় এ প্রতিবেদকের। তালাপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তালা লাগিয়েও তো তদবিরবাজদের ঠেকানো যাচ্ছে না।’ পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আসার সময় বাইরে দেখে আসেননি কী পরিমাণ মানুষ গিজগিজ করছে বাইরে? এরা যদি সবাই ভেতরে ঢোকে, তবে নিশ্বাস ফেলাও তো কষ্ট হবে, কাজ করা তো দূরের কথা।’