৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে দগ্ধ পাপিয়ার মৃত্যু
ছয়দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে অবশেষে মারা গেলেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নোয়াবাদ ইউনিয়নের উলুখলা গ্রামের অগ্নিদগ্ধ অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ পাপিয়া আক্তার (২০)। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতেই ঢাকায় লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়।
পাপিয়ার পারিবারিক সূত্র ও করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে জানা যায়, গত ২ মে সকালে শাশুড়ি পারুল আক্তার ও দেবর মাশেকুল হক (২২) পাপিয়ার মুখ আর হাত বেঁধে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় বাবা নজির মিয়াসহ অন্যরা পাপিয়াকে উদ্ধার করেন। পাপিয়াকে প্রথমে করিমগঞ্জ ও পরে জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেদিনই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়েছিল।
পাপিয়া চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, আগুনে তাঁর শরীরের প্রায় ৯০ ভাগ পুড়ে যায়।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই পাপিয়ার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে পাপিয়ার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ পাঁচজনকে আসামি করে করিমগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পুলিশ পাপিয়ার দেবর মাশেকুল হককে গ্রেপ্তার করে।
পাপিয়ার পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, করিমগঞ্জের নোয়াবাদ ইউনিয়নের উলুখলা গ্রামের আনোয়ারুল হকের ছেলে আশিকুল হক (২৫) দেড় বছর আগে মোবাইল ফোনে প্রেম করে মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের কৃষক নজির মিয়ার মেয়ে পাপিয়াকে বিয়ে করেন। কিন্তু আশিকের পরিবার এ বিয়ে মেনে নেয়নি। যে কারণে পাপিয়ার ওপর সব সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো। এমনকি পাপিয়াকে তালাক দিতে স্বামী আশিকের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছিল। এ নিয়ে গত ২ মে স্বামীর গ্রামে সালিস হওয়ার কথা ছিল। সেদিন পাপিয়ার বাবা নাজির মিয়াও কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে সালিসের উদ্দেশ্যে পাপিয়ার শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু সালিসের আগেই সকাল ৯টার দিকে ঘরের দরজা লাগিয়ে শ্বশুর আনোয়ারুল হকের উপস্থিতিতে শাশুড়ি পারুল আক্তার ও দেবর মাশেকুল হক (২২) পাপিয়ার মুখ ও হাত বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় স্বামী আশিকুল হক ঘটনাস্থলে না থাকলেও তাঁর ইন্ধন ছিল বলে জানা গেছে।
করিমগঞ্জ থানার ওসি বজলুর রহমান জানান, ঘটনার দিনই পাপিয়ার দেবর মাশেকুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে স্বামী আশিকুল হক, শ্বশুর আনোয়ারুল হক ও শাশুড়ি পারুল আক্তার পালিয়ে যান। তাঁদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।