১৭ আগস্ট : ভয়াল সেই দিনের কথা
১৭ আগস্ট ২০০৫। আমি তখন পুরোদস্তর আইনজীবী। এর মাত্র দুই বছর আগে এনটিভির কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পেলেও সে সময়ে ইন্টারনেটের দুর্বলগতির কারণে নিউজ পাঠানোর তত চাপ থাকত না, এ ছাড়া চ্যানেল সংখ্যা কম থাকায় প্রতিযোগিতা না থাকায় আইন পেশাটাও চালিয়ে নিচ্ছিলাম। সেদিন সকালেও যথারীতি আদালতে যাই।
সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে কোনো ধরনের পিটিশনে স্বাক্ষর দিতে হবে কি না, তা জানতে জজ আদালতের নিচতলার পূর্ব দিকের বারান্দায় মুহুরি বা আইনজীবী সহকারীর টেবিলের সামনের চেয়ারে গিয়ে বসলাম। একটু পরেই ২০-২৫ গজ সামনে বিকট বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনলাম। একটু সামলে নিয়ে ছুটে গিয়ে দেখি নিচতলায় জজ আদালতের মূল প্রবেশ পথে বিস্ফোরণের চিহ্ন হিসেবে বিভিন্ন ধরনের টুকরা-টাকরা পড়ে আছে। প্রবেশ পথ সংলগ্ন জানালার কাঁচও ভেঙে চুরমার। মিনিট তিনেক পরই আমার পেছনে বিস্ফোরণের শব্দ শুনলাম। সেদিকে তাকিয়েই আতঙ্কে হৃদস্পন্দন বন্ধ হবার উপক্রম। দেখলাম আমি যে চেয়ারটিতে বসে ছিলাম সেই চেয়ারটিসহ কয়েকটি চেয়ার বিস্ফোরণে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। সাথে সাথে পরবর্তী বিস্ফোরণটি ঘটল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দক্ষিণ দিকে নিচতলায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সামনে।
তিন তিনটি উপর্যুপরী বিস্ফোরণে যেন জজ কোর্ট ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পুরো চত্বর কেঁপে উঠল। সেই সাথে মানুষের মনে যে কি আতঙ্কের সুনামি উঠল, তা বলে বোঝানোর মতো না। শত শত মানুষ প্রাণভয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে যত দ্রুত পারে এলাকা ত্যাগ করছে। মুহূর্তে পুরো এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ল। প্রতিটি বিস্ফোরণস্থলেই পড়ে আছে সন্ত্রাসীদের ছড়িয়ে দেওয়া প্রচারপত্র। পড়ে দেখলাম জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামক একটি সংগঠন দেশের প্রচলিত আইনকে অনৈসলামিক ও শরীয়তবিরোধী ঘোষণা করে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের ঘোষণা দিয়েছে।
একটু পর খবর পেলাম জেলা শহরের পুরানথানা ও রেল স্টেশন এলাকাতেও দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ধীরে ধীরে শুনলাম শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে ৫০০ বোমা ফাটিয়ে অস্তিত্ব, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানান দিয়েছে জেএমবি।
ঘটনাস্থলে থাকার সুবাদে সম্ভবত আমিই প্রথম এনটিভিতে প্রথম টেলিফোনে ঘটনাটি জানালে খুব গুরুত্ব দেন নিউজ ডেক্সে কর্মরতরা। আমার কাছে এনটিভি থেকে একের পর এক ফোন আসতে থাকে। কিন্তু সারা দেশে একই ঘটনা ঘটায় দ্রুতই সঙ্গত কারণেই কিশোরগঞ্জ গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।
বিস্ফোরণের শব্দে আমার বাম কান দীর্ঘদিন ধরে কিছুটা অসাড় ধরনের হয়ে থাকত এবং কিছুটা শো শো করত। অনেক সময় লেগেছে পুরো ভালো হতে।