ছয় ধাপে আ. লীগ ২৬৭০, বিএনপি ৩৭২
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ছয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এবারই প্রথম ইউপিতে ভোটাররা সরাসরি রাজনৈতিকভাবে মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। অনিয়ম আর সহিংসতার দিক থেকেও এ নির্বাচন ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সমালোচনা ছিল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভূমিকা নিয়েও। রেকর্ড হয়েছে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার ক্ষেত্রেও।
গত ২২ মার্চ নবম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ শুরু হয়েছিল। গতকাল শনিবার শেষ হলো ছয়টি ধাপের ভোটযজ্ঞ। ইসির দেওয়া তথ্যমতে, এই ছয় ধাপে চার হাজার ৮৫ ইউপিতে ভোট হয়েছে। অনিয়মের কারণে বেশ কিছু ইউপির ফলাফল আটকে গেছে।
ভোটে অন্তত দেড় ডজন দল অংশ নিলেও মূল লড়াই হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ছয় ধাপে আওয়ামী লীগ দুই হাজার ৬৭০টিতে এবং বিএনপি ৩৭২টি ইউপিতে জয়ী হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৮৮০ জন।
ইসির হিসাবে, প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ, তৃতীয় ধাপে ৭৬ শতাংশ, চতুর্থ ধাপে ৭৭ শতাংশ, পঞ্চম ধাপে ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ ও ষষ্ঠ ধাপে ৭৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।
পঞ্চম ধাপে আ. লীগ ৪০৩, বিএনপি ৬২
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের শেষ ধাপে গতকাল অনুষ্ঠিত ৬৯৮টি ইউপির মধ্যে ৬৬৮টির ফলাফল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে এসেছে।
আজ রোববার বিকেলে এসব ইউপির বেসরকারি প্রকাশ করে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটি।
ফলাফল অনুযায়ী, চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৪০৩টিতে, বিএনপি ৬২ ইউপিতে জয় পেয়েছে। এ ধাপে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ১৮৪ ইউপিতে।
দুপুর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে ৬৬৮ ইউপির ভোটের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পৌঁছেছে। কেন্দ্র স্থগিত থাকায় ১৩ ইউপিতে পুনর্ভোটের প্রয়োজন পড়বে এবং বাকি ১৭ ইউপির ফল রাঙ্গামাটির প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ইসিতে পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে।
এ ধাপে ২৪ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন একক প্রার্থীরা। বিনা ভোটে পার হওয়া ২৪ জনের মধ্যে দুজন স্বতন্ত্র ও বাকিরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো প্রাথমিক ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শেষ ধাপে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ৩৮১ ইউপিতে জয় পেয়েছেন। বিনা ভোটে জয়ী আরো ২২ জনকে নিয়ে এ ধাপে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৪০৩ ইউপিতে জিতেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৬২ ইউপিতে। জাতীয় পার্টি ১৫টি, জেপি একটি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একটি ইউপিতে জয় পেয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ষষ্ঠ ধাপে ৭৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। এসব ইউপির এক কোটি ১৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭১৯ জন ভোটারের মধ্যে ৮৫ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৭ জন ভোট দিয়েছেন।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, রাঙ্গামাটির সব ইউপির তথ্য পেতে বিলম্ব হতে পারে। দিনশেষে সব ইউপির প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়ার পর ইসির অনুমোদন সাপেক্ষে গণমাধ্যমে জানানো হবে।
ধাপ অনুযায়ী ইউপি ফলাফল
- প্রথম ধাপের চূড়ান্ত ফলে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হয়েছেন ৪৯৪ জন ও বিএনপির ৫০ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১০৯ ইউপিতে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ৫৪ জন।
- দ্বিতীয় ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪১৯ জন ও ধানের শীষের ৬৩ জন বিজয়ী হন। ১১৭ ইউপিতে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের ৩৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
- তৃতীয় ধাপের ভোটে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৩৬৬ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৯ জন। বিএনপির প্রার্থীরা ৬০টি ইউপিতে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান ১৩৯টিতে।
- চতুর্থ ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪০৫ জন জয়ী হয়েছেন। এর সঙ্গে যোগ হয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ৩৫ জন। এ ধাপে বিএনপির ৭০ জন ও ১৬১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন।
- পঞ্চম ধাপে আওয়ামী লীগ থেকে ৩৯২ জন ভোটে এবং ৩৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর বিএনপির ৬৭ জন, স্বতন্ত্র ১৭০ জন, জাতীয় পার্টির নয়জন এবং অন্য দলের একজন প্রার্থী চেয়ারম্যান হয়েছেন।
- শেষ ও ষষ্ঠ ধাপে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৪০৫টিতে, বিএনপি ৬২ ইউপিতে জয় পেয়েছে। এ ধাপে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ১৮৪ ইউপিতে।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। এ ইসির মেয়াদে দুই সিটি ও কিছু উপনির্বাচন অনুষ্ঠানও বাকি রয়েছে।