গাছতলায় ক্লাস
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের লক্ষ্মীমাড়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমনিতে শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছিল; তার ওপর কালবৈশাখী ঝড়ে বিদ্যালয়ের একমাত্র টিনশেড ঘরটি বিধ্বস্ত হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এখন শ্রেণিকক্ষের অভাবে বিদ্যালয়ে চত্বরে বটগাছতলায় খড় এবং মাটিতে চট বিছিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী উম্মে কুলসুম ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ফেরদৌসী আক্তার জানায়, গত শনিবার ঝড়ে তাদের বিদ্যালয়ের একমাত্র টিনশেড ঘরটি বিধ্বস্ত হয়। ফলে রোববার থেকে তাদের গাছতলায় ক্লাস করতে হচ্ছে। রোদের মধ্যে ক্লাস করতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানায় ওই দুই শিক্ষার্থী।
বিদ্যালয়টির উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভাবক মশিউর রহমান। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ১০-১২ বছর ধরে দেখে আসছি এ স্কুলের পড়াশোনার করুণ চিত্র। বাঁশের বেড়া ও টিনশেডের একটি মাত্র ঘরেই চলে আসছে শিক্ষা কার্যক্রম।
আরেক অভিভাবক মহিদুল ইসলাম সরকারের কাছে দ্রুত বিদ্যালয়টিতে একাডেমিক ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুলতানা পারভীন জানান, শ্রেণিকক্ষ না থাকায় দীর্ঘদিন থেকে কিছু শিক্ষার্থীকে গাছতলায় পাঠদান করানো হচ্ছিল। কিন্তু গত শনিবারের ঝড়ে একমাত্র ঘরটি বিধ্বস্ত হওয়ায় এখন সবাইকেই গাছতলায় পড়ানো হচ্ছে।
শিক্ষিকা দিবা রানী রায় বলেন, জায়গা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত স্কুলে আসতে চায় না। তাদের ধরে রাখা অনেক কষ্টকর। ঝড়ে ঘরটি ভেঙে পড়ায় গাছতলায় পড়তে শিক্ষার্থীদের অনীহা বেড়েছে।
২০০৪ সালে স্থাপিত লক্ষ্মীমাড়াই রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে সরকারীকরণ করা হয়। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চারজন শিক্ষক দিয়ে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীকে পড়ানো হচ্ছে। স্থানীয় উদ্যোগে বাঁশের বেড়া আর টিনশেড দিয়ে একটি ঘরে তিনটি কক্ষ তৈরি করে পাঠদান করানো হচ্ছিল। শনিবার সেটি বিধ্বস্ত হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদ আলম বেগ জানান, এর আগেও কয়েকবার বিদ্যালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠিকঠাক করে আবারও পাঠদান করানো হয় সেখানে। কিন্তু শনিবারের ঝড়ে একেবারে বিধ্বস্ত হওয়ায় সেখানে আর ক্লাস করানো সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। একাডেমিক ভবনের জন্য একাধিকবার বলা হলেও আজ পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, শনিবারের ঝড়ে লক্ষ্মীমাড়াইসহ উপজেলার তিনটি স্কুল ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। বিদ্যালয়গুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। পাঠদান প্রক্রিয়া যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান শিক্ষা কর্মকর্তা।