পল্লী বিদ্যুতের ছয় কোটি টাকা উধাও, ক্যাশিয়ার পলাতক
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্যাংক হিসাবে ছয় কোটি ৩৬ লাখ টাকার গরমিল পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এই টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর পরই প্রতিষ্ঠানের কোষাধ্যক্ষ (ক্যাশিয়ার) পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কর্তৃপক্ষ চার কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে।
এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে একজন ডিজিএমকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি কোষাধ্যক্ষকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে।
বরখাস্তকৃত কর্মকর্তারা হলেন পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) হাফিজ আহমেদ, অ্যাকাউন্টস (ফিন্যান্স) রণজিৎ কুমার দেবনাথ, অ্যাকাউন্টস অফিসার তরিবুল্লাহ আহমেদ ও ক্যাশিয়ার জায়েদা খানম।
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী একই স্থানে যেকোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তিন বছর চাকরি করতে পারেন। তবে ১৯৯২ সাল থেকে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোষাধ্যক্ষ পদে কর্মরত রয়েছেন জায়েদা খানম। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ে বদলি করা হয়।
জায়েদা খানমের পরিবর্তে পটুয়াখালীতে কোষাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন মীরা রাণী দাস। তিনি যোগদান করার পরই হিসাবের এ গরমিল ধরা পড়ে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির হিসাব রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের পটুয়াখালী পুরান বাজার শাখায়। অফিস রেকর্ড অনুযায়ী, ব্যাংক হিসাব নম্বরে ১০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে ব্যাংকে রয়েছে মাত্র চার কোটি ১৩ লাখ টাকা। বাকি ছয় কোটি ৩৬ লাখ টাকা বিভিন্ন সময়ে তুলে নেওয়া হয় অথবা জমা করা হয়নি।
সদ্য যোগদান করা কোষাধ্যক্ষ মীরা রানী দাস গত ৩১ মার্চ পটুয়াখালী অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) হাফিজ আহমেদ ও জেনারেল ম্যানেজার (অর্থ) রণজিৎ কুমারকে বিষয়টি অবহিত করেন। জিএম জায়েদাকে বরাখাস্ত করাসহ জরুরিভাবে পটুয়াখালী অফিসে আসার নির্দেশ দেন।
জায়েদা গত ৩ এপ্রিল পটুয়াখালী জেনারেল ম্যানেজারের কক্ষে দেখা করেন। পরে দুপুর ২টায় পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনের নিজ বাসায় খাবারের কথা বলে বেরিয়ে যান জায়েদা। অভিযোগ রয়েছে, এর পরই একটি মাইক্রোবাসে উঠে পালিয়ে যান জায়েদা। তারপর থেকে তাঁর আর কোনো সন্ধান মেলেনি।
বরখাস্তকৃত জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী হাফিজ আহমেদ জানান, ‘টাকা আত্মসাতের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর পরই জায়েদাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তাঁকে পটুয়াখালী অফিসে জরুরিভাবে ডাকা হয়েছে।’
বিভাগীয়ভাবে এ ঘটনায় বাউফলের ডিজিএমকে প্রধান করে ক্যাশিয়ার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান হাফিজ আহমেদ।
জায়েদা কীভাবে পালিয়ে গেলেন এমন প্রশ্নে হাফিজ আহমেদ বলেন, ‘জায়েদা টাকা আত্মসাতের দায় স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে তিনি লিখিত বর্ণনাসহ টাকা পরিশোধ করবেন বলে মুচলেখা দিয়েছেন। তাঁর বাসা অফিসের সামনেই। তাই জায়েদা দুপুরের খাবার খেতে বাসায় যাবে এমন কথা বলে আমার কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়।’
টাকা আত্মসাতের ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন বলে জানান হাফিজ আহমেদ।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জেনারেল ম্যানেজার (জিএম), জেনারেল ম্যানেজার (অর্থ) এবং কোষাধ্যক্ষের যৌথ পরিচালনায় লেনদেন হলেও জায়েদা একা কীভাবে টাকা আত্মসাত করেছেন? এই প্রশ্ন করেছেন সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের অনেক কর্মকর্তাই।
জেনারেল ম্যানেজার (অর্থ) রণজিৎ কুমার জানান, ‘আমি এক বছর তিন মাস ধরে এখানে কর্মরত আছি। ব্যাংকের হিসাব বিবরণী কোষাধ্যক্ষ জায়েদা খানম ব্যাংক থেকে এনে অফিসে দাখিল করতেন। কিন্তু সেটা যে ভিত্তিহীন অথবা তৈরি করা ছিল তা বোঝা যায়নি। এমনকি বাৎসরিক অডিট রিপোর্টেও তা ধরা পড়েনি। গত ৩১ মার্চ টাকা আত্মসাতের খবর জানাজানি হয়। সে অনুযায়ী অভিযুক্ত জায়েদাকে বরখাস্ত করেছে অফিস। কিন্তু জায়েদা যখন অফিস থেকে পালিয়ে গেল তখন আমি পুরান বাজার অগ্রণী ব্যাংক শাখায় অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।’
টাকা আত্মসাতের ঘটনার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন রণজিৎ কুমার।
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির টাকা আত্মসাতের ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি।’