মাদারীপুরে ভয়ংকর হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং কালচার
মাদারীপুরে দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে কিশোরদের গ্যাং ‘কালচার’। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরুনোর আগেই কিশোরদের একটা অংশ জড়িয়ে পড়ছে এ গ্যাং ‘কালচার’-এ। শহরজুড়ে তাদের বেপরোয়া আচরণ এখন আতঙ্কের নাম। এই গ্যাং কালচারের প্রভাবে খুন হয়েছে একাধিক কিশোর-যুবক। বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে নিহত হয়েছে একাধিক কিশোর।
মাদারীপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে চারটি গ্রুপ বর্তমানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব গ্রুপের সদস্যরা দলবদ্ধভাবে শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করে থাকে। প্রতি গ্রুপে ১০ থেকে ৫০ জন সদস্য রয়েছে। এরা শুধু বখাটেপনা নয়, মাদক সেবন, এলাকায় প্রভাব বিস্তার, দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানোসহ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ও দলগত ধর্ষণের মতো কর্মকাণ্ডেও অংশ নিচ্ছে।
গ্যাং কালচারের জেরেই গত মঙ্গলবার রাতে মাদারীপুর শহরের জেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকা থেকে সোহান শেখ (১৪) নামের এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহত কিশোর সোহান মাদারীপুর ইউআই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে বাসা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বের হয় কিশোর সোহান। সন্ধ্যা পার হলেও তার কোনো সন্ধান না পেয়ে খোঁজাখোঁজি করতে থাকে পরিবারের লোকজন। রাত ১০টার দিকে একটি ভবনের পাশে থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সোহানকে। পরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত কিশোরের বাবা হাবিব শেখের দাবি, তার ছেলেকে কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের আশপাশের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি টিভি) ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজে একাধিক কিশোরকে ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে। তবে তারা ওখানে কী কারণে গেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ১৪ জনকে আটক করেছে।
কয়েক মাস আগে শহরের সবুজবাগ এলাকায় এরশাদ নামের এক যুবককে খুন করা হয়। এটাও এলাকাভিত্তিক প্রভাব বিস্তারের কারণেই ঘটেছে বলে জানা গেছে।
মাদারীপুরের শহীদ বাচ্চু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কে এম রাশেদ কামাল বলেন, ‘পারিবারিক শিক্ষার অভাবে অনেক স্কুল ও কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব অনেক।’
মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য এনায়েত হোসেন নান্নু বলেন, ‘মাদারীপুরে কিশোর অপরাধ বেড়েছে। গতকাল রাতে সোহান নামের এক স্কুলপড়ুয়া কিশোর খুন হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করব এই গ্যাং কালচার বন্ধ করার জন্য।’
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সওগাতুল আলম বলেন, ‘কিশোর অপরাধ নিয়ে কাজ করার জন্য অফিশিয়াল নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করছি। এ ছাড়া কিশোর সোহানের নিহতের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসি টিভি) ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। শিগগিরই রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে।