বিস্ফোরণে বেলুন নিয়ে উড়ে গেল রিয়া
ঝিলপাড়ের বস্তিতে থাকে সাত বছরের রিয়া মনি। পুরোনো জিনিসপত্র সংগ্রহ করে বিক্রি করে। কয়েকটা পুরোনো বোতল বিক্রি করে দুটি বেলুন কিনেছিল রিয়া। ঘরে ঢুকে মায়ের সেলাই মেশিন থেকে সুতা নিয়ে বেলুন দুটি বাঁধে। একটি বেলুন দিয়ে দেয় ছোট ভাইকে। আরেকটি নিয়ে বেরিয়ে যায়, আকাশে ওড়াবে বেলুন।
রিয়া ঘর থেকে বের হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান মা। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে রীতিমত উড়ে যায় রিয়া। মাটিতে পড়ার পর দেখা যায় রিয়ার নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে।
আজ বুধবার বিকেলে মিরপুরের রূপনগর এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বেলুনে ভরার গ্যাস সিলিন্ডার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় চারজন। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় আরো একজন। নিহত পাঁচজনের মধ্যে চারজনই শিশু। ওই ঘটনায় ১০ জনেরও বেশি মানুষ গুরুতর আহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু।
নিহতদের মধ্যে একজন রিয়া মনি। সন্ধ্যায় রিয়াদের ঘরে গিয়ে দেখা যায় বিলাপ করছেন তার মা মদিনা বেগম। তিনি সেলাইয়ের কাজ করেন। ঘরে একটি সেলাই মেশিন আছে। ওই মেশিন থেকেই সুতা নিয়েছিল রিয়া; বেলুন বাধবে বলে। ওই ঘরেই ছিল রিয়া ছোট ভাই মাহিম। ওর বয়স আড়াই বছর।
মদিনা জানান, ছোট ভাইকে বেলুনটি দিয়ে রিয়া আবার চলে যায় বেলুনের গ্যাস ভরা লোকটির কাছে। কারণ সেখানে আরো শিশুরা ছিল। সবাই মিলে হৈচৈ করছিল। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে বের হন মদিনা বেগম। কিন্তু মেয়েকে খুঁজে পাননি। কিছু সময় পর শুনতে পান তাঁর মেয়েকে পঙ্গু হাসপাতালে (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মদিনা বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার রিয়া মনি দুইটা বেলুন কিনেছে। ঘরে এসে আমার সেলাই মেশিনের সুতা দিয়ে বেলুন দুটি বাঁধল। বেঁধে একটা আমার ছোট ছেলেকে দিল। ঘর থেকে বের হলো। পাঁচ মিনিট পরেই শুনি বিকট শব্দ। বেরিয়ে গিয়ে আমার মনিকে আর পাইনি।'
মদিনা বলেন, ‘পরে শুনি আমার এক চাচাতো ভাই ওকে নিয়ে গেছে পঙ্গু হাসপাতালে। তারপর শুনি আমার মেয়ে মরে গেছে। আমার কাছ থেকে সুতা নিয়ে সেই সুতা দিয়ে বেলুন বানল। সেই বেলুন উড়াতে গিয়ে উড়ে গেল আমার মেয়ে। ও আল্লাহ, আমি কী করে সহ্য করব? রিয়া অনেক সুতা বানল অনেক দূর উড়াবে বলে।’
ঘটনাস্থলে থাকা রিয়ার চাচাতো বোন শিল্পী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘বিস্ফোরণ ঘটল আর সাথে সাথে আমার বোন অনেক উপরে উঠে গেল! আমার বোনের নাঁড়িভূঁড়ি বেরিয়ে গেছে। আমি চোখের সামনে আমার বোনের উড়ে যাওয়া দেখেছি!’