ভোলার ঘটনা ‘পূর্বপরিকল্পিত’, বুধবারে বিএনপির বিক্ষোভ
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের দফায় দফায় চারজন নিহতের ঘটনাটি ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে মনে করে বিএনপি। এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
পাশাপাশি ভোলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই দেশ অনাদিকাল হতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনুপম নিদর্শন হয়ে আছে। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের শান্তিপূর্ণ বসবাস। কোনো ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা বা কারো ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করা এই দেশের আবহমানকালের ঐতিহ্যে নেই। আমরা মনে করি, ভোলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত।’
পরে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘ভোলার ঘটনার প্রতিবাদে আগামী বুধবার ঢাকা মহানগরীতে থানায় থানায় এবং সারা দেশে জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভ করবে বিএনপি।’
আজ সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপি নেতা।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ভোলার এক প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও ভয়াবহ পৈশাচিকতায় চারজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। পুলিশের এমন মারমুখী আচরণ ও নিষ্ঠুরতা ক্ষমার অযোগ্য। এই ভোটারবিহীন সরকারের দুঃশাসনে মানুষের জীবনের মূল্য এখন পশু-পাখির মূল্যের চেয়ে কমে গেছে। বিদেশে অনেক বড় বড় বিক্ষোভে পুলিশকে একটি বুলেট খরচ না করেও ধৈর্যসহকারে মোকাবিলা করতে দেখেছি আমরা। আর এই দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই অসহিষ্ণু আচরণ করে পুলিশ বাহিনী।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন সুকৌশলে ভোলায় মানুষের প্রতিবাদটিকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার ঘৃণ্য চক্রান্ত চালাচ্ছে। অথচ আপনারা ভোলা হত্যাকাণ্ডের পর সরকার ও প্রশাসনের বক্তব্য এবং মন্তব্য শুনলে অনুধাবন করতে পারবেন, তারা দুঃখ প্রকাশ না করে হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গাইছে। আর প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বভাবসুলভ ভাষায় প্রতিবাদকারীদের প্রতি হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘ঘটনার শুরু শুক্রবার থেকে। ঘটনার পর দেওয়া পুলিশের ব্যাখ্যায় মনে হয়, তারা পুরো বিষয়টি আগে থেকেই জানত। তাহলে এত সময় পেয়েও পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারল না কেন? তাদের বিশ্বাস জন্মেছে, মানুষকে খুন, গুম, অপহরণ করেই যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৮ অক্টোবর ভোলার বোরহানউদ্দিনে বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি হ্যাক করে মেসেঞ্জারে ধর্মীয় অবমাননাকর বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর বিষয়টি তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ বিপ্লব চন্দ্রকে তাঁদের হেফাজতে আটক করে রাখে। বিপ্লবের আইডিটি হ্যাক করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল রোববার সকালে ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে মুসল্লিরা বিপ্লবের ফাঁসির দাবিতে ঈদগাহ মাদ্রাসার মাঠে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। পুলিশ এই সমাবেশের অনুমতি দেয়নি এবং জনতাকে অনুরোধ করে সমাবেশ না করার জন্য। তারপর হাজারো জনতা সেখানে জড়ো হয়। এবং সেখানে উত্তেজিত মুসল্লিরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। আক্রমণকারীদের গুলিতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন।
পুলিশ আরো জানায়, একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে ও সরকারি জানমাল রক্ষার্থে ও উত্তেজিত লোকজনকে নিবৃত্ত করতে প্রথমে টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে এবং পরে শটগান চালায় পুলিশ। পরে পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এ সময় চারজন নিহত হন।
নিহতরা হলেন বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান পাটওয়ারী (৪৫), বোরহানউদ্দিন উপজেলার মহিউদ্দিন পাটওয়ারীর ছেলে মাহবুব পাটওয়ারী (১৪), মনপুরা হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান (৪০) ও বোরহানউদ্দিনের মো. শাহিন।