কাউন্সিলর রাজীব যুবলীগ থেকে বহিষ্কার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে আওয়ামী যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১০টায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এক বন্ধুর ফ্ল্যাটে তিন ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় এই যুবলীগ নেতাকে। এরপরই তাঁকে বহিষ্কার করা হয় বলে জানান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ।
আজ রোববার সকালে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুতেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত এবং গ্রেপ্তার হবেন, তাঁদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা হবে। তারেকুজ্জামান রাজীবকে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে কারণে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাতেই রাজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাঁরাই অপরাধে জড়িত হবেন, তাঁদেরই বহিষ্কার করবে যুবলীগ।’
বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর তারেকুজ্জামান রাজীবকে নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসায় ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এ সময় রাজীবের কাছ থেকে ব্যাংকে পাঁচ কোটি টাকা জমা দেওয়ার রসিদ, সাত বোতল বিদেশি মদ, একটি অবৈধ পিস্তল ও ৩৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ভূমি দখলের অভিযোগে এ অভিযান চালায় র্যাব।
অভিযান শেষে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম সাংবাদিকদের বলেন, ‘চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসবাদসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসতে থাকে কাউন্সিলর রাজীবের বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন ধরে আমরা তাঁকে খুঁজছিলাম। কিন্তু সে আত্মগোপনে ছিল।’
এরপরই বসুন্ধরা এলাকা থেকে রাজীবকে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর মোহাম্মদপুরের বাসায়। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা পুরো বাসায় চলে র্যাবের তল্লাশি। বাসায় ব্যাপক তল্লাশির পর কাউন্সিলর রাজীবকে নিয়ে যাওয়া হয় বাসার অদূরেই তাঁর কার্যালয়ে।
সেখানে ঘণ্টাব্যাপী অভিযান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অভিযানে থাকা র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘তাঁর বাড়িতে ও অফিসে কোনো কিছুই আমরা পাইনি। আমরা যা বুঝতে পেরেছি, বাড়িতে তাঁর আর্থিক লেনদেনের যে ডকুমেন্টগুলো ছিল, চেকবই থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়, এগুলো এরই মধ্যে তিনি সরিয়ে ফেলেছেন। এবং তাঁরই এক স্টাফের আত্মীয়ের বাড়ি থেকে চেকবইগুলোর কিছু নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে আমরা দেখেছি, ব্র্যাক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তিনি পাঁচ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন।’
সারোয়ার আলম আরো বলেন, ‘তিনি আসলে কাউন্সিলর হওয়ার পরপরই ২০১৬ সালে তিনটি কোম্পানি খুলেছেন—সিলিকন, এক্কা ও নাইমা এন্টারপ্রাইজ। এই তিন প্রতিষ্ঠানের নামে আসলে তিনি জমি দখল করেছেন। এ অপরাধগুলো করতে গিয়ে তিনি যে লোকদের ব্যবহার করেছেন, আত্মীয় এবং অনাত্মীয়, প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এদিকে ক্যাসিনোর সঙ্গে রাজীবের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছে র্যাব।
এর আগে পাশের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর বাসা থেকেও বিপুল টাকা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।