গোপালগঞ্জে ইডিসিএলে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর, তদন্ত কমিটি গঠন
গোপালগঞ্জ অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে (ইডিসিএল) গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কর্মচারি ইউনিয়নের নেতারা কর্মকর্তাদের অফিসের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ গিয়ে কর্মকর্তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে কর্মচারি ইউনিয়ন ও কর্মকর্তারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে।
এ ঘটনায় অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানির অ্যাডমিন ম্যানেজার শাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন কোম্পানির এমডি প্রফেসর ডা. এহসানুল কবির জগলুল। কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানির গোপালগঞ্জ প্লান্টের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এ প্লান্টে কর্মচারি ইউনিয়নের কোনো কমিটি নেই। কাজী ইউসুফ নিজেকে স্বঘোষিত সভাপতি ও আজিজ চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক দাবি করে প্লান্টের মূল ভবনের সেন্ট্রাল অয়্যার রুম দখল করে কর্মচারি ইউনিয়নের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
এ প্লান্টটিতে প্রকল্পের কাজ এখনো সমাপ্ত হয়নি। কোম্পানির কাছেও হস্তান্তর করা হয়নি। তাই এখানে সিবিএ বা ইউনিয়নের কার্যক্রমের কোনো বৈধতা নেই। জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্লান্ট পরিদর্শন করে মূল ভবন থেকে সিবিএ অফিস সরিয়ে নিতে বলে। কর্মচারি ইউনিয়নের কর্মীদের প্লান্টের মূল ভবনের রুম ছেড়ে দিতে দুই মাস আগেই জানানো হয়। কিন্তু দুই মাস পার হলেও তারা রুম ছাড়েনি।
কোম্পানির এমডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ রুমে প্লান্টের মেশিনসহ মালামাল ঢোকানো হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কর্মচারি ইউনিয়নের লোকজন বিকেলে ওই রুমের পেছনের দিকের গ্লাসবিহীন জানালা দিয়ে কোনো কিছুর সাহায্যে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালে টাঙ্গানো বঙ্গবন্ধুর ছবি ফ্লোরে ফেলে ভেঙে করে।
এ ঘটনায় কর্মচারি ইউনিয়নের লোকজন উল্টো কর্মকর্তাদে অভিযুক্ত করে রুমে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ ঘটনার সময় কর্মচারি ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মিজানুর রহমান ও দপ্তর সম্পাদক আগস্টিন উপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশ এসে কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে।
গোপালগঞ্জ প্লান্টের স্বঘোষিত কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি কাজী ইউসুফ এ ঘটনায় কর্মকর্তাদের দায়ী করে বলেন, ‘তারা আমাদের ফাঁসাতে ওই রুম থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভেঙেছে। ঘটনার সময় ওই রুমের সামনে কর্মকর্তাদের পাহারাদার কর্মরত ছিলেন। রুমে তালা দেওয়ার প্রতিবাদে আমরা গেট বন্ধ করে প্রতিবাদ করেছি। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমরা সেখান থেকে চলে আসি।’
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কোম্পানির এমডি প্রফেসর ডা. এহসানুল কবির জগলুল বলেন, ‘সেখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাদের রুম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাদের স্বার্থহানি হয়েছে, যারা ওই রুমে থাকতে চেয়েছিল তারাই ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে সন্দেহ করছি। কর্মকর্তারা এ ঘটনা ঘটাননি, এটি আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনার পর রাত ৮ টার দিকে কেন্দ্রীয় সিবিএ নেতারা আমার কাছে এসে ক্ষমা চেয়েছেন।’