ফের রিমান্ড শুনে কাঁদলেন অমিত সাহা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহাকে ফের তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ এ আদেশ দেন। রিমান্ড আদেশের পর কেঁদে ফেলেন অমিত সাহা।
এ ছাড়া একই মামলায় ছাত্রলীগের আরেক কর্মী খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীরের তিন দিন রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। অপর আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মাজহারুল ইসলাম এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ বেলা ৩টায় অমিত সাহার বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। রিমান্ড আবেদনের পরে অমিত সাহার আইনজীবী মঞ্জুরুল আলম মুঞ্জু রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন।
শুনানিতে আইনজীবী মুঞ্জু বলেন, ‘অমিত সাহা সম্পূর্ণ নির্দোষ। এজাহারে তাঁর নাম নেই। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। পূজার ছুটিতে তিনি বাড়িতে ছিলেন। শুধু নামের কারণে এবং ফেসবুকে কিছু বন্ধুর উসকানির জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সন্দেহজনকভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে তাঁকে দেখা যায়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, ঘটনাস্থলে অমিত সাহা উপস্থিত ছিলেন না। এটা প্রি-প্ল্যানড মার্ডার ছিল না। তাঁকে (অমিত সাহা) পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রিমান্ডের কোনো অগ্রগতি নেই। আর কোন কোন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তাঁর নাম বলেছে উল্লেখ করা হয়নি। অমিত সাহার রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিন প্রার্থনা করছি।’
শুনানি শেষে বিচারক আসামি অমিতের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড আদেশের পর অমিত আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে অঝরে কেঁদে ফেলেন। তিনি কারো সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলেননি।
এদিকে পাঁচ দিন রিমান্ড শেষে বুয়েট ছাত্রলীগের কর্মী ও ১১ নম্বর আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বিচারক তোহাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গত ১১ অক্টোবর অমিত ও তোহাকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছিল ডিবি পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের চার দিন পর গত ১০ অক্টোবর রাজধানীর সবুজবাগ এলাকার একটি বাসা থেকে বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৪ অক্টোবর তাঁকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটির অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে এই তথ্য উঠে এসেছে যে, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথোপকথনের মাধ্যমে উক্ত ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিল।’
‘তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অধিকতর তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় অমিত সাহাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো,’ যোগ করে ছাত্রলীগ।
গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে তাঁর ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ২০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন অমিত সাহা। এ ঘটনায় পরের দিন ৭ অক্টোবর আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলার রাতেই বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১১ জনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এ পর্যন্ত মোট ছয়জন জবানবন্দি দিয়েছেন। এঁরা হলেন মামলার ৫ নম্বর আসামি বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ৭ নম্বর আসামি ও বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ৩ নম্বর আসামি ও বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ৯ নম্বর আসামি মুজাহিদুর রহমান, বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক ও মামলার ৪ নম্বর আসামি মেহেদী হাসান রবিন এবং মামলার ৬ নম্বর আসামি ও বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাহিত্য সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান মনির।