নজর রাখছেন শেখ হাসিনা, আসছে স্বচ্ছ নেতৃত্ব
দীর্ঘদিন পর হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন। আর এ সম্মেলনে পদ-প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়ে গেছে এর মধ্যে। নানা কারণে যারা দলের দুর্নাম কুড়িয়েছে, এমন নেতারা নন, বরং স্বচ্ছ ভাবমূর্তিই আগামী সম্মেলনের নেতৃত্বে আসার নির্ণায়ক হবে—এমনটাই আশা করছেন সবাই।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার যারা পদপ্রত্যাশী তাদের প্রত্যেকের অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ডকে নজরে রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তারা অনেকটাই ছিটকে পড়তে পারেন সংগঠন থেকে।
সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সভাপতি ও পঙ্কজ নাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হয়েছিল। মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও ওই কমিটি এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম এসেছে কাওছারেরও।
দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী অনেকেই কোণঠাসা ছিলেন। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর তারাও মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আর নেতৃত্বের লড়াইয়ের এ তালিকায় রয়েছেন বর্তমান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথসহ সংগঠনের আরো চার সাংগঠনিক সম্পাদক। এঁরা হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু, একই কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকীব বাদশা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল আলীম বেপারী।
এ ছাড়া কেন্দ্রীয় শীর্ষ পদের লড়াইয়ে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সাচ্চু, সহসভাপতি মতিউর রহমান মতি, মইন উদ্দিন মইন ও নির্মল রঞ্জন গুহ, দপ্তর সম্পাদক সালেহ মাহমুদ টুটুল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন এবং সমবায় ও স্বনির্ভরতা বিষয়ক সম্পাদক এইচ এম কামরুল হাসান।
সম্মেলন ও নেতৃত্ব প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা নেত্রীর ১/১১-এর পরীক্ষিত সৈনিক। নির্যাতন সহ্য করেছি। সততা, স্বচ্ছতা, কমিটমেন্ট ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে দলের জন্য সব সময় নিয়োজিত রেখেছি। নেতৃত্বে যেই আসুক, তার যেন অবশ্যই সততা, স্বচ্ছতা ও নেত্রীর কাছে কমিটমেন্ট থাকে।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ সাকীব বাদশা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সততা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সব সময় দলের জন্য কাজ করছি। দলের দুঃসময়ে যারা জীবন বাজি রেখে দলের জন্য কাজ করেছেন, রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলন করেছেন, তারাই যেন নেতৃত্বে আসে—এটাই আমাদের চাওয়া।’
সম্মেলন নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানা টিপু বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগে নেতৃত্ব পাওয়ার প্রধান মানদণ্ড হোক ক্লিন ইমেজ, ত্যাগী মনোভাব ও সাংগঠনিক দক্ষতা।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটিতে শীর্ষ পদে আসতে চান কামরুল হাসান রিপন, আনিসুজ্জামান রানা ও তারিক সাঈদ (বাঁ থেকে)। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন দেবাশীষ বিশ্বাস। সাধারণ সম্পাদক হন আরিফুর রহমান টিটু। এবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতৃত্বের জন্য লড়াইয়ে রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান রানা, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক।
কামরুল হাসান রিপন বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে যারা জীবন বাজি রেখে দলের জন্য কাজ করেছেন, রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলন করেছেন, তারাই যেন নেতৃত্বে আসে।’
তারিক সাঈদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় আমাদের প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানাই। যারা দুঃসময়ে দলের পাশে থেকে কাজ করেছেন, রাজপথে থেকেছেন—তারাই যেন নেতৃত্বে আসে এই প্রত্যাশা আমার।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটিতে শীর্ষ পদে আসতে চান কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, ইসহাক মিয়া ও ফরিদুর রহমান ইরান (বাঁ থেকে)। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা মহানগর উত্তর
এ দিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৬ সালের ৩১ মে। উত্তরের সভাপতি নির্বাচিত হন মোবাশ্বের চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হন ফরিদুর রহমান খান ইরান। ইরান এখন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
উত্তরে নেতৃত্ব পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফরিদুর রহমান ইরান, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া, সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক ও মো. গোলাম রাব্বানী।
কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ দিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতি করে আসছি অত্যন্ত ক্লিন ইমেজ নিয়ে। দলের দুঃসময়ে যারা জীবন বাজি রেখে দলের জন্য কাজ করেছেন আমি তাদের একজন।’
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, দুর্নীতির সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাদের নাম আসায় সহযোগী সংগঠনগুলোতে নতুন নেতৃত্ব আনার প্রক্রিয়া খুব চুলচেড়া বিশ্লেষণ করে দেওয়া হবে। এজন্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদে যারা আসতে চান শিগগিরই তাদের জীবনবৃত্তান্ত (বায়োডাটা) জমা দিতে বলা হবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
এ বিষয়ে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছি। ১৩টি উপকমিটি করেছি। তাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। সারা দেশে আমাদের সাংগঠনিক ৭৯টি জেলা থেকে ২৫ জন করে কাউন্সিলে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া কাউন্সিলর ও ডেলিগেট মিলে প্রায় ১০ হাজার লোকের সমাগম হবে।’
কেমন নেতৃত্ব আসতে পারে জানতে চাইলে সভাপতি বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের পরীক্ষিত, ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, ক্লিন ইমেজ আছে, তারাই নেতৃত্বে আসবে।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন আগামী ১৬ নভেম্বর ২০১৯ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে। সেদিন বেলা ১১টায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। এরপর পাশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন।
১৯৯৭ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম কমিটি হয়। পরে ২০০২ সালে প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আর সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ নাথ।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটি দেখভাল করছেন সাবেক সভাপতি বাহাউদ্দিন নাছিম। ফলে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাঁর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।