মামলা করে মা-বাবাকে নিয়ে ঘরছাড়া কমল
আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার কমল চন্দ্র বেপারী এখন জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ফের হামলা করে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে হামলাকারীরা। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে মা-বাবাকে নিয়ে ঘরছাড়া কমল এখন আত্মীয়দের বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর একটি মামলায় ঢাকার আদালতে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পথে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা কমলের ওপর হামলা করে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় ঢাকার কোতোয়ালি থানায় হত্যা চেষ্টা মামলা হয়। পুলিশ আদালত চত্বরের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলার দৃশ্য ও আসামিদের শনাক্ত করেছে। এজাহারভুক্ত এক আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার পর অপর আসামিরা অব্যাহতভাবে কমলকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন তিনি।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রামের ভবতোষ বেপারীর ছেলে কমল চন্দ্র বেপারীর সঙ্গে প্রায় ১০ বছর আগে পাশের গ্রামের রাম প্রসাদ দাসের মেয়ে মুক্তা রানীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর কমল জানতে পারেন, মুক্তা রানীর সঙ্গে অন্য এলাকার এক চিহ্নিত সন্ত্রাসীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরও মুক্তা ওই সন্ত্রাসীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। পারিবারিকভাবে সালিশ বৈঠক করেও মুক্তাকে এ থেকে বিরত রাখা সম্ভব হয়নি।
পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় কয়েক মাস আগে মুক্তা ওই সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা চালিয়ে কমলের মা-বাবাকে গুরুতর জখম করেন। একই সঙ্গে কমলকে বাড়িতে গেলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ ঘটনায় কমল মতলব দক্ষিণ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এ জিডির পর মুক্তা ও সন্ত্রাসীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে তারা কমলের মা-বাবাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং তাদের স্বর্ণালংকার, জায়গাজমির দলিল, টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। একই সঙ্গে মুক্তা বাদী হয়ে কমল ও তাঁর মা-বাবাসহ নিকত্মায়ীদের নামে ঢাকায় তিনটি মামলা করেন।
মুক্তার দায়ের করা মামলায় হাজিরা দিতে কমল গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন। হাজিরা দিয়ে বের হয়ে আদালত চত্বরের কাছেই রায়সাহেব বাজার মোড়ের কাছে পৌঁছামাত্র ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা কমলের ওপর হামলা করে। হিরামন দাস ও বিদ্যুৎ চন্দ্র দাসসহ আট-দশজন কমলকে বেদম মারধর শুরু করেন। তারা কমলকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকেন। এতে কমল অচেতন পড়লে স্থানীয় লোকজন তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। জরুরি বিভাগে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে পরের দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় কমল বাদী হয়ে ২৬ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খালিদ শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, আদালতে হাজিরা দিতে এসে হামলার শিকার হওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। এ মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা হামলার ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।