বিচারক নামার পর দৃশ্যপট পাল্টাল এজলাসে
সদ্য বহিষ্কৃত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। একই সঙ্গে তাঁর সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক আরমানকেও মাদক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে রিমান্ড শুনানি উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা নেওয়া হয়। আদালতের বাহিরে বিভিন্ন অস্থায়ী দোকান তুলে দেওয়া হয়। মামলায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া কাউকে আদালতের এজালাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। শুনানির সময় আদালতের ভিতরে সম্রাটের সমর্থকদের দেখা গেছে। সম্রাটকে আদালতে হাজির করার পরে অনেক সমর্থক সম্রাটের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। তাঁর সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করার চেষ্টা করেন। এরপর আদালতের বিচারক উঠলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শুনানি করেন। তার শুনানির পরে সম্রাটের প্রধান আইনজীবী ও যুবলীগ দক্ষিণের আইন সম্পাদক শাহনাহাজ পারভীন হীরা শুনানি করেন। তার শুনানির সময় বিভিন্ন বক্তব্যে পিছনে থাকা আইনজীবী ও সমর্থকরা টেবিল চাপরান ও সমর্থন জানান। এরপর বিচারক আপত্তি জানালে তারা সম্রাটের রিমান্ড বাতিল করে দেওয়ার জন্য বলেন।
রিমান্ড শুনানি শেষে বিচারক তাঁর এজলাস থেকে নেমে যান এবং আদেশ পাঁচ মিনিট পর দেওয়া হবে বলে জানান। এরপরই পাল্টে যায় আদালতের পরিস্থিতি। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সম্রাটের সাথে কথা বলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন ও আদালতের কর্মচারীরা বিভিন্ন ভাবে সম্রাটের কাছে কাগজের চিরকুট ও রুমাল দেন। এরপর সম্রাটের আইনজীবীরা অবাধে কথা বলেন। কিছুক্ষণ পরই আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা ( জিআরও) নিজাম উদ্দিন আদালতের এজলাসে এসে বলেন, মাদক ও অস্ত্র দুই মামলায় সম্রাটকে পাঁচ দিন করে ১০ দিন ও মাদকের মামলায় আরমানকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
হাতকড়া খোলার আকুতি
সদ্য বহিষ্কৃত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে আদালতের এজলাসের আসামির ডকে হাজির করা হলে তার দুই হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। এরপরে সম্রাটের আইনজীবীরা তাঁর হাতকড়া খুলে দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে নিবেদন জানালে আদালত তা না শুনে মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
শুনানির সময় যেমন ছিলেন সম্রাট
সম্রাটের রিমান্ড শুনানির সময় তার আইনজীবীরা বিভিন্ন বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি খুব মনযোগ দিয়ে তা শুনছিলেন। তবে তিনি কোনো বক্তব্য দেওয়ার চেষ্টা করেননি।
বেলা সাড়ে ১১টার কিছু পরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় সিএমএম আদালতের সাধারণ মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কাউকে সিএমএম আদালতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ
রিমান্ড শুনানির আগে দুপুর পৌনে ১২টার কিছু পরে সম্রাটকে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এরপর তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। সম্রাট আদালতে আসবেন তাকে এক নজর দেখার জন্য সকাল থেকে নেতাকর্মীরা ভিড় করতে থাকেন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন সম্রাটের মুক্তির জন্য। এ ছাড়া সম্রাটকে আদালতে তোলার আগে নেতাকর্মীদের সিএমএম আদালতের সামনে থেকে বের করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সম্রাটের মুক্তির জন্য স্লোগান দিতে থাকে।
সম্রাটের মুক্তি চেয়ে পোস্টার
সম্রাটের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট মুক্তি পরিষদ ঢাকা সিএমএম আদালত চত্বর পোস্টারে ছেয়ে ফেলে।
পোস্টারে লেখা আছে, ‘সম্রাট খুবই অসুস্থ, মানবতার জননী তাকে বাঁচান।’
এ ছাড়া আরো লেখা রয়েছে, ‘সম্রাটের হাতে হাতকড়া রাজনীতিবিদেরা চরম লজ্জিত।