আবেগঘন গণভবন, আবরারের মাকে প্রধানমন্ত্রীর সান্ত্বনা
বুয়েটে হত্যার শিকার মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের মা-বাবা, ছোট ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা আজ সোমবার বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী আবরারের মাকে জড়িয়ে ধরে পরম মমতায় সান্ত্বনা দেন এবং মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, মা রোকেয়া বেগম, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ, চাচা ও মামা আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যান। প্রথমে তাঁরা বৈঠক কক্ষে অবস্থান করেন। বৈঠক কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাওয়ার পর তাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন আবরার ফাহাদের মা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেও আবেগী হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী আবরারের মাকে পরম মমতায় বেশ কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী আবরারের মাকে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখেন এবং মাথা ও পিঠে হাত বুলিয়ে দেন। আবরারের মাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে জড়িয়ে ধরে নির্ধারিত আসনে বসার পরিবর্তে আবরারের মায়ের পাশে বসে যান। আবরারে মায়ের মাথাটা তাঁর কোলে তুলে নেন এবং পরম মমতায় পিঠে ও মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। এ সময় গণভবনের বৈঠক কক্ষে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবরারের মা-বাবাকে বলেন, ‘আপনারা যা হারিয়েছেন তার জন্য সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই।’
তখন আবরারের মা প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করে ছেলের বিভিন্ন স্মৃতিচারণা করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দয়া করে আমার দিকে তাকান। আমি এক রাতে সবকিছু হারিয়েছি। আমি আপনজন হারানোর যন্ত্রণা বুঝি।’
বুয়েটে হত্যার শিকার আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, মা রোকেয়া বেগম ও ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ আজ সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে যান। ছবি : ফোকাস বাংলা
প্রধানমন্ত্রী আবরারের মাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘আবরারের হত্যাকারীরা মানুষ নয়। যার সঙ্গে তারা বসে পড়ালেখা করছিল তাঁকে তারা কীভাবে হত্যা করতে পারে?’
এ সময় আবরারের মা রোকেয়া খাতুন তাঁর সন্তানের হত্যার পর দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর আপনি যে মাতৃসুলভ ভূমিকা পালন করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই।’ বারবার শ্বাস নিয়ে আবরারের মা কথাটি আট থেকে দশবার বলেন।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ঘটনার পর পুলিশকে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ‘কিন্তু বুয়েটের কিছু ছাত্র কেন ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করল তা আমার বোধগম্য নয়।’ ছেলে হারানো মাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আবরারকে ফেরত দিতে না পারলেও তাঁর হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ইতিমধ্যে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এ সময় সেখান উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং আবরার ফাহাদদের প্রতিবেশী ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব-উল-আলম হানিফ, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
গত ৬ অক্টোবর রাতে আবরার ফাহাদকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দোতলার একটি কক্ষে রাতভর পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় সারা দেশের লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়ে। হত্যার ঘটনায় আবরার ফাহাদের বাবা বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১৯ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১২ জনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এখন পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত ও সন্দেহভাজন মোট ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আজ সোমবার পর্যন্ত মামলার পাঁচ আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।