দ্রুত সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর
দ্রুত সময়ের মধ্যে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দোষী যে দলেরই হোক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
আজ সোমবার বিকেলে আবরার ফাহাদের মা-বাবা ও একমাত্র ছোট ভাই গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের এ কথা বলেন তিনি।
গণভবন সূত্র জানায়, বিকেল ৫টার দিকে আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, মা রোকেয়া বেগম ও ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ গণভবনে যান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। এ সময় তাদের সান্ত্বনা দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
এর আগে আবরার ফাহাদের মা একটি টেলিভিশনের সাংবাদিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার আকুতি জানান। এরপর আজ বিকেলে আবরার ফাহাদের মা-বাবা ও ভাইকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ডেকে নেওয়া হয়।
গত ৬ অক্টোবর রাতে আবরার ফাহাদকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দোতলার একটি কক্ষে রাতভর পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় সারা দেশের লোকজন ক্ষোভে ফেটে পড়ে। হত্যার ঘটনায় আবরার ফাহাদের বাবা বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১৯ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১২ জনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
বুয়েটে হত্যার শিকার আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, মা রোকেয়া বেগম ও ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ আজ সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে যান। ছবি : ফোকাস বাংলা
এখন পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত ও সন্দেহভাজন মোট ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আজ সোমবার পর্যন্ত মামলার পাঁচ আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৯ অক্টোবর গণভবনে আয়াজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অপরাধী কে, কোন দলের—আমি সেটি দেখি না। আমার কাছে অপরাধীর পরিচয় হলো অপরাধী। এদের কোনো পরিচয় থাকতে পারে না। এখানে কে ছাত্রদল, কে ছাত্রলীগ আমি সেটা বিবেচনা করিনি। আমি বিবেচনা করেছি একটা বাচ্চা ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কী নির্মমভাবে তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এসব দেখে স্বাভাবিক একটা সন্দেহ থাকে, এরা কারা? কারা এটা ঘটিয়েছে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে কিছু মানুষ আছে এরা সব সময় সরকারি দল করে। এরা সুবিধা নেয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্ররা নামার আগেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। নির্দেশ দিয়েছি; যে অপরাধী তাদের সবাইকে অ্যারেস্ট করো। এই বুয়েটে তো আমাদের অনেকে হত্যার শিকার হয়েছে। এগুলোর কি বিচার হয়েছে? কই এসব ঘটনায় কেউ তো গ্রেপ্তার হয়নি। অনেক উদাহরণ আমি দিতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটুক। আমরা একটা সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছি। তার মাঝেও এমন একটা ঘটনা ঘটেছে। আমরা সব ব্যবস্থা নিয়েছি। তার পরও কেন এত আন্দোলন? কিসের স্বার্থে আন্দোলন? আমরা বিচার করব। আমিও পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি, আমি তো বিচার পাইনি। আমার ৩৮ বছর লেগেছে বাবা, মা, ভাই হত্যার বিচার পেতে।’