‘র্যাগিং নিয়ে ব্যবস্থা নিলে আবরার হত্যা ঘটতো না’
হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেছেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিংয়ের ঘটনা নিয়ে যদি আগে থেকে শিক্ষকরা ব্যবস্থা নিতেন তা হলে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনা ঘটতো না।’
আজ শনিবার আইন,বিচার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল রিপোর্টারদের জন্য আয়োজিত এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন ও গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি আজ আবরার হত্যার ঘটনা নিয়ে মিছিল করেছে। আজ কেন তারা মিছিল করছে? র্যাগিং বন্ধে আগে থেকে বিশ্ববিদ্যালগুলো যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতো তা হলে আবরারের হত্যার মতো ঘটনা ঘটতো না।’
কর্মশালায় বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ আরো বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে যৌনহয়রানি বন্ধে সকল প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠনের বিষয়টি আগে নিজেদের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের মালিক ও সম্পাদকদের এ সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত করতে হবে। এর ফলে গণমাধ্যমগুলোতে কমিটি গঠন আরও সহজ হবে।'
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, 'নারীরা মুখ খুলতে থাকলে যৌন হয়রানি অনেকটাই কমে আসবে। নারীদের প্রতি একধরণের অসহায় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকানো হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে যৌন হয়রানির মনোভাব সৃষ্টি হয়। তাই আমাদেরকে এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারীরা আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নারীদের বাদ দিয়ে সমাজ ও দেশ অচল। এমনকি পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্যও সমাজে নারীরা গুরুত্বপূর্ন।’
বিচারপতি শেখ হাসান বলেন, ‘করপোরেট লেভেলে যৌন হয়রানির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এক জরিপে দেখা যায়, করপোরেট লেভেলে চাকুরি করেন ১০০ জন নারীর মধ্যে ৭৫ জন নারী বলেছেন তারা যৌনহয়রানির শিকার হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে গিভ অ্যান্ড টেক পদ্বতি অর্থাৎ প্রমোশন বা সুবিধা দেওয়ার নাম করে যৌন হয়রানি করা হয়।’
হাইকোর্টের রায়ের আলোকে সুপ্রিম কোর্টেও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে যে রায় দেওয়া হয়েছিল সে রায়টিও আইনজীবী সমিতি বা সুপ্রিম কোর্ট বাস্তবায়ন করেনি। আমরা যখন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কমিটি নিয়ে জবাবদিহিতা চাইবো তখনতো তারা পাল্টা আমাদের কাছে প্রশ্ন তুলবে।’ তাই অবিলম্বে ওই রায় বাস্তবায়নের আহ্বানও জানান তিনি।
আইন,মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সুপ্রিম কোর্টের সাংবাদিক সংগঠন ল' রিপোর্টার্স ফোরামের প্রশিক্ষণ সম্পাদক মো. মাসউদুর রহমানের সঞ্চালনায় এবং সংগঠনটির সভাপতি ওয়াকিল আহমেদ হিরনের সভাপতিত্বে এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, ফোরামের সাবেক সভাপতি এম. বদিউজ্জামান, অ্যাডভোকেট নাহিদা আনজুম কণা, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, পরিচালক অ্যাডভোকেট তৌহিদা খন্দকার, সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট জোবায়দা পারভিন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সীমা জহুর। এছাড়াও কর্মশালায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ল' রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান রাজু।