চেয়ারম্যান ছাড়া যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সভা, আনিসকে বহিষ্কার
সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভা। এটি সংগঠনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। ওই সভাতেই দপ্তর সম্পাদকের পদে থাকা কাজী আনিসুর রহমান আনিসকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দিপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘সভা ডাকার অনুমতি চেয়ারম্যান দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের নির্দেশই এই সভা হয়েছে। তবে তিনি কেন আসেননি, সে বিষয়টি জানা নেই। হয়তো অসুস্থতার কারণেও না আসতে পারেন। চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে নয়, চেয়ারম্যানের নির্দেশেই বৈঠকটি হয়েছে। উনি কোথায় আছেন, আমরা কেউই জানি না।’
যুবলীগ চেয়ারম্যান থাকার নৈতিকতা হারিয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দিপু আরো বলেন, ‘যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদের বিষয়ে একমাত্র সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার। আর যাদের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিষয়েও তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যুবলীগের চেয়ারম্যনের পদটার মালিক কিন্তু আমি না, পদ দেওয়ার মালিক যিনি, আপনারাও জানেন এই প্রশ্নের উত্তর আমার দেওয়া সম্ভব নয়।’
সম্মেলনে সভাপতিত্ব কে করবেন—জানতে চাইলে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এর দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। উনি যেভাবে বলবেন, সেভাবেই হবে। চেয়ারম্যান একটি বড় পোস্টের জন্য প্রধানমন্ত্রী যেই সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা তাই করব।
কাজী আনিসকে বহিষ্কার
বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দিপু বলেন ‘কাজী আনিসের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রেসিডিয়ামের সর্বসম্মতিক্রমে একমত পোষণ করেছে কাজী আনিসকে বহিষ্কার করার জন্য। সেই আলোকে কাজী আনিসকে আমরা বহিষ্কার করেছি। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দেওয়া হবে। তবে কাকে দেওয়া হবে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
কাজী আনিসকে বহিষ্কার প্রসঙ্গে আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ হোসেন বলেন, ‘কাজী আনিস বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক। দুর্নীতির কথা আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি এবং অর্থনৈতিক তছরুপের কারণে তাঁকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সরদার মোহাম্মদ আলী মিন্টু বলেন, 'আনিস যুবলীগের কমিটি বিক্রি করে, চাঁদাবাজি, দরপত্র থেকে কমিশন নিয়ে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণে সম্পদ বানিয়েছে। যার ভয়ে এখন সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ২০০৫ সালে কাজ শুরু করে আনিস। সাত বছর পর কর্মচারী থেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক পদে বসে। এখন সে একাধিক গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির মালিক। কম্পিউটারে নিয়মিত সারা দেশের যুবলীগ কমিটির তালিকা তৈরি করতে গিয়ে সব তথ্য তার মুখস্থ। এ কারণে চেয়ারম্যানের (যুবলীগপ্রধান) ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় সে। ২০১২ সালে যুবলীগের নতুন কমিটি গঠনের সময় আনিসকে উপদপ্তর সম্পাদক করা হয়। পরে দপ্তর সম্পাদক পদটি খালি থাকায় ছয় মাসের মধ্যেই এই পদ পায় আনিস।’
যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দরপত্র থেকে কমিশন এবং সংগঠনের বিভিন্ন কমিটিতে পদ-বাণিজ্য করে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ ওঠার পর গত ১৫ দিন কাজী আনিস আত্মগোপনে আছেন। দলীয় কার্যালয়ে তিনি যাচ্ছেন না, বাড়িতেও নেই তিনি।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, শেখ শামসুল আবেদীন, আলতাব হোসেন বাচ্চু, মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরন, আবদুস সাত্তার মাসুদ, মো. আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, আবুল বাশার, মোহাম্মদ আলী খোকন, অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, শাহজাহান ভুঁইয়া মাখন, ডা. মোখলেছুজ্জামান হিরু, শেখ আতিয়ার রহমান দিপু।