সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের ছেলেরা আমার সন্তান : আবরারের মা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া বেগম বলেছেন, ‘আমি এক ছেলেকে হারিয়েছি, আর কোনো ছেলেকে হারাতে চাই না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতে রোকেয়া বেগম আরো বলেন, ‘আমার ছেলের জন্য সব ছেলে রাজপথে নেমেছে। আমি চাই না, আমার মতো আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক। আমার এক ছেলে নেই, এখন সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের ছেলেরা আমার ছেলে। ওদের ওপর যেন কোনো অত্যাচার না হয়।’
বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে আবরারের মা রোকেয়া বেগমের এসব বক্তব্য পাওয়া যায়।
আবরার হত্যাকাণ্ডের পর রাজপথে নেমে টানা পঞ্চম দিনের মতো বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। আবরার হত্যার দ্রুত বিচারসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে অনড় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া আবরার হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও রাজপথে মানববন্ধন ও সমাবেশ করছেন।
‘আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি’ জানিয়ে সাংবাদিকদের কাছে আবরারের মা প্রশ্ন করেন, ‘যে ভিসি আমার ছেলেকে নিরাপত্তা দিতে পারল না, সেই ভিসি কীভাবে হাজার হাজার ছেলেমেয়ের নিরাপত্তা দেবে?’
রোকেয়া বেগম আরো বলেন, ‘এক ছেলেকে হারিয়েছি, আরেক ছেলেকে হারাতে চাই না। আমি ওর নিরাপত্তা চাই। আমার ছেলেকে যারা মেরেছে, তাদের আমি শাস্তি চাই, তাদের বুয়েট থেকে বহিষ্কার চাই। আমার বড় ছেলেকে সবচেয়ে বড় ডিগ্রি নিতে ওখানে পাঠিয়েছিলাম। সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হলো না। আমার সেই স্বপ্ন যেন ছোট ছেলেকে দিয়ে পূরণ করতে পারি, দেশবাসী সবার কাছে আমি এই দোয়া চাই।’
বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে রোববার মধ্যরাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে বুয়েটের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মো. মাসুক এলাহী তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে আবরারকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে মারধর করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী।
এদিকে আবরারকে যারা বাঁচতে দেয়নি, তাদের কঠিন পরিণতি দেখে কবরে যেতে চান আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ। দ্রুত চার্জশিটের পাশাপাশি দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি দ্রুত বিচার আইনের আওতায় নিয়ে আসারও দাবি জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে নিজ বাড়িতে আবরারের বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলার আসামি বাদেও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না, তদন্ত করে বের করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয় এবং শিক্ষাঙ্গনে এমন মেধাবী ছাত্র যেন অকালে ঝরে না পড়ে।’