কুষ্টিয়ায় আবরারের বাড়িতে তোপের মুখে বুয়েট উপাচার্য
‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ স্লোগানে স্লোগানে কুষ্টিয়ায় আবরার ফাহাদ রাব্বীর বাড়িতে গিয়ে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও আজ বুধবার এলাকাবাসীর ক্ষোভের মুখে বাড়ির গেট থেকেই ফিরতে বাধ্য হন উপাচার্য। তিনি সেখানে পৌঁছলে এলাকাবাসী তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরেন। এ সময় তাঁর গাড়ির সামনে রাস্তায় শুয়ে পড়েন আবরারের ফুপাতো ভাইয়ের স্ত্রী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তাঁর ওপর চড়াও হলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ।
জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম সেখান থেকে ফিরে আসেন। এ নিয়ে আবরার ফাহাদের পরিবার ও স্বজনরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নিহত আবরার ফাহাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে আজ বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে কুষ্টিয়ায় তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমারখালীর রায়ডাঙ্গায় পৌঁছান উপাচার্য। প্রথমে গ্রামের কবরস্থানে যেখানে আবরার চিরনিদ্রায় শায়িত সেখানে নামেন তিনি। সেখানে উপস্থিত আবরারের দাদা আবদুল গফুর ও বাবা বরকত উল্লাহর সঙ্গে কথা বলে উপাচার্য আবরারের কবর জিয়ারত করেন। সেখানে তিনি তাঁর ওপর বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দায়সারা কথা বলেন।
বুয়েটের উপাচার্য নিহত আবরার ফাহাদের বাড়িতে গেলে তাঁর গাড়ির সামনে আবরারের ফুফাতো ভাইয়ের স্ত্রী শুয়ে পড়লে পুলিশ তাঁর ওপর চড়াও হয়। ছবি : এনটিভি
পরে উপাচার্য সেখান থেকে নিহত আবরার ফাহাদের বাড়িতে যান। রাস্তায় নেমে র্যাব-পুলিশের সঙ্গে হেঁটে যাওয়ার সময় এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েন তিনি। ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ ও উপাচার্যবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ঘিরে ধরে শত শত নারী-পুরুষ। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে উপাচার্য ফিরে আসেন। গাড়িতে উঠলে এলাকার লোকজন গাড়ি ঘিরে ধরে স্লোগান দেয়। এ সময় আবরারের ফুফাতো ভাইয়ের স্ত্রী তমা খাতুন গাড়ির সামনে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে পুলিশ তাঁকে সরিয়ে দিতে চড়াও হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি ও মারধরের ঘটনা ঘটে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় উপাচার্যের গাড়ি সেখান থেকে পুলিশ প্রহরায় বেরিয়ে আসে। পুলিশ চলে গেলে আরো ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকার লোকজন। উপাচার্যের পদত্যাগসহ তারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষী পুলিশের বিচার দাবি করেন।
গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার পর উপাচার্য সাইফুল ইসলামকে দেখা যায়নি। আবরারের মৃতদেহও দেখতে যাননি। শরিক হননি বুয়েটে আবরারের জানাজায়। পরদিন সোমবার শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে উপাচার্যকে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে ক্যাম্পাসে থাকার আলটিমেটাম দেন। এরপর মঙ্গলবার বিকেলে উপাচার্য তাঁর দপ্তরে গিয়ে হল প্রভোস্টদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন।
উপাচার্যের এই নিষ্ক্রিয়তায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন আবরারের পরিবার-পরিজন। চরম ক্ষোভের সঙ্গে আবরারের বাবা-মা ও ভাই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তারা প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, অন্যসব আসামির ক্রসফায়ার হয়, একজন মেধাবী বুয়েট ছাত্রকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার পরও তাদের কেন ক্রসফায়ার হয় না?