ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি : মান্না
ভারত সফরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ব্যর্থ হয়েছেন দাবি করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। এই চুক্তির মাধ্যমে সরকার যে বড় রকমের অপরাধ করেছে, তা ক্যাসিনো অভিযানের মাধ্যমে চেপে রাখা যাবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলা হবে।’
আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মান্না।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকে, বিশেষ করে ২০১৪ সালে কোনো ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে যেকোনো দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবারও সেটার ব্যতিক্রম হয়নি। কোন পক্ষ কতটা লাভবান হবে, তার কিছুটা তারতম্য মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু এবার যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, এতে বাংলাদেশের ন্যূনতম স্বার্থ রক্ষা হয়নি।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক আরো বলেন, ‘সর্বপ্রথম আমরা দাবি করব, এই চুক্তিগুলোর খুঁটিনাটি জনগণের কাছে প্রকাশ করা হোক। আমরা বিশ্বাস করি, তাতে আমাদের সামনে আরো অনেক ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।’
মান্না বলেন, ‘এই সফরে সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে সরকার এরই মধ্যে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু খুঁজলে দেখা যাবে, হাতেগোনা যেসব বিষয়ে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে, সেগুলো খুব তুচ্ছ। দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে অতি নিচু লেভেলে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর লেভেলে এগুলো নিয়ে কথা বলা বাদে চুক্তি স্বাক্ষর করার কিছু নেই।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘বছরের পর বছর তিস্তা চুক্তি ঝুলে আছে। উপকূলের সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে দুই দেশ। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের উপকূলে ২০টি রাডার স্টেশন স্থাপন করবে ভারত। আমাদের দেশের শক্তিশালী ও সারভেইলেন্সসহ সব দিক থেকে সক্ষম নৌবাহিনী থাকার পরও কেন এটি করতে হবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। আর স্থাপন করা হলে সেখানে মনিটরিংয়ে বাংলাদেশের কর্তৃত্ব কতটুকু থাকবে এবং এর দ্বারা আমরা কতখানি উপকৃত হব, তা পরিষ্কার করা প্রয়োজন।’
মান্না আরো বলেন, ‘ভারতে তরলীকৃত গ্যাস রপ্তানি করা নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে অস্পষ্টতা আছে। এই গ্যাস আমদানিকৃত এলপিজি বা এলএনজি নাকি আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস তরলীকৃত করে রপ্তানি করা হবে, সেটা স্পষ্ট না।’
‘ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়ার প্রশ্নে মানবিক কারণের কথা বলেছেন পররাষ্ট্রসচিব। সীমান্তে হত্যার মতো অমানবিক কাজ দিনের পর দিন চলছে। এবার সফরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছিল, এ ব্যাপারেও খুব দৃঢ়ভাবে কথা হবে। সীমান্তে হত্যা পুরোপুরি বন্ধ হবে— এ রকম কোনো মানবিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ অপরপক্ষ থেকে আদায় করতে পারেনি। ন্যূনতম কূটনৈতিক আশ্বাসও ছিল অনুপস্থিত।’
মান্না আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব সময় উঁচু গলায় দাবি করা হয়, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্মরণকালের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থান করছে। সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকা খুবই ভালো কথা। কিন্তু সেই সম্পর্ক শুধু দেওয়ার, আমাদের পাওয়ার জন্য নয়, তাই সেটা আমাদের দেশের জন্য বিপর্যয়কর। দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটি এখন পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে যেসব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, তার প্রায় সবই শেষপর্যন্ত এক পক্ষীয়ই থেকেছে।’
নিজের অবস্থান থেকে ভারত সঠিক কাজটিই করছে উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘ভারত দর কষাকষির মাধ্যমে তার পক্ষে সর্বোচ্চ অর্জনটা করে নিচ্ছে। নিজ দেশের প্রতি মমত্ববোধ ও দায়বদ্ধতা থাকলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উচিত পাল্টা দর কষাকষি করা এবং আমাদের স্বার্থে সব কিছু না হলেও অনেক কিছু অর্জন করে নিয়ে আসা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ঠিক এভাবেই নির্ধারিত হয়। এর মধ্যে চ্যারিটির কিছু নেই। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান অভিযান নিয়ে মান্না বলেন, ‘কিছুদিন আগেই হঠাৎ করে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। দেশের পরিস্থিতি না জানলে যে কারো কাছে ব্যাপারটি মনে হবে যে, গত এক দশক ধরে অন্য কোনো দল ক্ষমতায় ছিল। সেই দলগুলো এ দেশে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে এবং একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় এসে এখন সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে। অথচ গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এই দলটি ক্ষমতায় আছে এবং বাংলাদেশকে দুর্নীতির অভয়ারণ্য বানিয়ে ফেলা হয়েছে এ সময়টিতেই।’