সম্রাটের সঙ্গে গ্রেপ্তার কে এই আরমান?
নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা থেকে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সঙ্গে এনামুল হক আরমানকেও আটক করেছে র্যাব। ওই উপজেলার একটি গ্রামে লুকিয়ে ছিলেন সম্রাট। কিন্তু কে এই আরমান?
সম্রাট ও আরমানকে ঢাকার র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আরমান সম্রাটের ক্যাসিনো গুরু।
র্যাব জানিয়েছে, র্যাব আপাতত জানতে পেরেছে এনামুল হক আরমান সম্রাটের খুব ঘনিষ্ট সহযোগী। বাড়ি নোয়াখালীতে। আরমান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, আরমানের এক সময় সিঙ্গাপুরে যাতায়াত ছিল। তিনি সিঙ্গাপুর থেকে ক্যাসিনোর বিষয়ে প্রথম জানেন। তারপর তিনি সম্রাটকে এই ঘটনা জানান। সেখান থেকে সম্রাট আরমানকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাসিনো কারবারে জড়িয়ে পড়েন।
জানা যায়, আরমানের উত্থানটা ঘটে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকা থেকে। নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসে বায়তুল মোকাররম এলাকায় লাগেজ বিক্রি করতেন তিনি। পরে এক সময় যুবলীগের রাজনীতি শুরু করেন। এরপর তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগে সহসভাপতির পদ পান।
যানা যায়, আরমান চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবেও পরিচিত। গত ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া শাকিব খান ও বুবলী অভিনীত ‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ সিনেমাটির প্রযোজক আরমান। এটি আরমানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রথম ফিল্ম। ‘দেশ বাংলা মাল্টিমিডিয়া’ নামের চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আরমান। এ ছাড়া ‘আগুন’ নামের দ্বিতীয় ফিল্মের শ্যুটিংয়ের কাজও শুরু করেছেন আরমান।
এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। রাজধানীর অধিকাংশ ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন সম্রাট, এমন খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বরাত দিয়ে গণমাধ্যমেও আসতে শুরু করে। ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাব ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে। ওই দিন সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলের ফকিরাপুল এলাকায় ইয়ংমেনস ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব।
ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকায় ইয়ংমেনস ক্লাব ক্যাসিনোর মালিক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার পর থেকে যুবলীগ, কৃষক লীগ ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা র্যাব ও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। জব্দ করা হয় কোটি কোটি টাকা। খালেদের জবানবন্দিতে ক্যাসিনোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকা অনেক প্রভাবশালী নেতার নাম উঠে আসে বলেও গণমাধ্যমে খবর আসে। যুবলীগ নেতা সম্রাট তাঁদের ভেতরে অন্যতম।
অভিযান শুরুর পরের দিন দিবাগত গভীর রাত থেকে সম্রাট কাকরাইলের ভূঁইয়া ম্যানশনের নিজ কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন বলে জানা যায়। সে সময় শত শত নেতাকর্মী তাঁর কার্যালয়ে পাহারায় ছিলেন। তবে অভিযান শুরুর তিন দিন পর্যন্ত সম্রাটকে প্রকাশ্যে দেখা গেলেও পরে ছিলেন আত্মগোপনে। চলে যান কার্যালয় ছেড়ে। কার্যালয় ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে তিনি ছিলেন লাপাত্তা। তাঁর খুব কাছের দলীয় লোকজনও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারতেন না তিনি কোথায় আছেন।
তখন থেকেই গণমাধ্যমে খবর আসতে শুরু করে, ইসমাইল হোসেন সম্রাট আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে থাকা অবস্থায় ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ঢাকা ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন বলেও গুঞ্জন শোনা যায়।
সম্রাটের ব্যাংক হিসাবও তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্রাটের গ্রামের বাড়ি ফেনীর পরশুরাম উপজেলার সাহেববাজার এলাকায়।
কারাগারে আরমান
রোববার সন্ধ্যায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে র্যাব-১০ ও র্যাব-৭ সদস্যরা আরমানকে নিয়ে একটি হেলিকপ্টারে করে ফেনী স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। পরে আরমানকে ফেনীতে র্যাব-৭-এর কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এরপর তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ডের পর কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম সন্ধ্যায় সম্রাটের কার্যালয়ে অভিযান শেষে সাংবাদিকদের জানান, কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তারের সময় আরমানকে মাতাল অবস্থায় পাওয়ায় তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।