যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার হলো শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান
শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদকে গ্রেপ্তার করতে আরো তিন মাস আগে থেকে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ঢাকা এবং ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো দুবাই তথ্য আদান প্রদান শুরু করে। অবশেষে গত বুধবার ইন্টারপোলের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিসান আহমেদকে গ্রেপ্তারের আগে একাধিকবার ঢাকা ও দুবাই এনসিবি তথ্য আদান-প্রদান করেছে। প্রথম দিকে তার তথ্য নিশ্চিত হতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে ঢাকা ও দুবাইকে। কারণ, নিজেকে লুকিয়ে রাখতে জিসান একাধিক দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে আসছিল।
আজ শুক্রবার পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য জানান।
মহিউল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ঢাকা এনসিবির কাছে সাহায্য চায় জিসানকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে। এরপর আমরা ডিবির সঙ্গে একাধিকবার বসে বৈঠক করেছি। তারপর আমরা দুবাই এনসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এখান থেকে ঠিক তিন মাস আগে এনসিবি দুবাইয়ের সঙ্গে এনসিবি ঢাকা যোগাযোগ শুরু করে। শুরু হয় তথ্য আদান-প্রদান।
প্রথমদিকে জিসানের সাম্প্রতিকালের ছবি ছিল না আমাদের কাছে। পরে দুবাই এনসিবি আমাদেরকে তার নতুন ছবি পাঠাতে চিঠি লেখে। তখন আমরা তার নতুন ছবি পাঠাই তাদেরকে। এরপর দুবাই এনসিবি আমাদেরকে জানাল, সে ভারত ও ডমিনিকান রিপাবলিকের পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। ভারতের পাসপোর্টে নাম লেখা আলী আকবর। তবে ডমিনিকান রিপাবলিকের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করলে তারা ঢাকা এনসিবিকে জানান, এই নামে কোনো পাসপোর্ট নেই তাদের।
পরে আমরা আবার দুবাই এনসিবিকে চিঠি লিখি। এরপর তারা আরো অনেক ধরনের তথ্য আমাদের কাছে জানতে চান। সে সব তথ্যের জবাব আমরা রেডি করে পাঠাই। আমরা তার বর্তমান ফোন নম্বর দেই। তার নামে বাংলাদেশে ১১টি মামলা আছে, সেটা সরবরাহ করি। সে দুবাইতে বসেও শক্তি আর প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশে নানা ধরনের অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে সেসব ডকুমেন্ট দেই। এ ছাড়া জিসানের ব্যাপারে আরো অনেক ডকুমেন্ট আমরা দুবাই এনসিবিকে পাঠাই।’
এআইজি মহিউল ইসলাম বলেন, ‘তারপর আবার দুবাই এনসিবি কিছু কোয়ারিস পাঠায় আমাদের কাছে। পরে আমরা ডিবির সঙ্গে আবারো বৈঠক করি। ডিবি পুনরায় তার বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। তার আরো বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে আমরা দুবাই এনসিবিকে পাঠাই। এরপর তারা বিশ্বাস করতে সক্ষম হয় যে, জিসান মূলত বাংলাদেশি। কিছুদিন আগে ঢাকা এনসিবি থেকে যোগাযোগ করা হলে দুবাই এনসিবি জানায়, জিসান এখন তাদের নজরদারিতে আছে।’
এনসিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার দুবাই এনসিবি আমাদেরকে জানায়, বুধবার জিসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন সে দুবাই এনসিবির হেফাজতে রয়েছে। আমরা এখনো দুবাই এনসিবির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। তারা আমাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করছে।’
জিসানের কাছে ভারতের পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। তাকে আগে ভারতে পাঠানো হবে নাকি সোজা বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মহিউল ইসলাম বলেন, ‘তাকেও ভারতে পাঠানোরও একটা সম্ভাবনা রয়েছে। আবার বাংলাদেশেও পাঠাতে পারে দুবাই এনসিবি। কিন্তু ভারতে পাঠালেও তাকে বাংলাদেশে আনতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না আমাদের। কারণ, ভারতের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সেক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা তো আমরা পাবই।’
গ্রেপ্তারকৃত জিসানকে নিয়ে আজ শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইতে গ্রেপ্তার হয়েছে। আমরা অনেক আগেই দুবাই সরকারকে তার ব্যাপারে জানিয়েছিলাম। আমরা তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তাকে ফিরিয়ে আনতে কিছু আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। আমরা আশা করছি এগুলো সম্পন্ন করেই তাকে দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’