নারায়ণগঞ্জে ‘জঙ্গি আস্তানা’য় অভিযান শুরু, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ আটক ৩
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে যে বাড়িটি ঘিরে রেখেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেখানে অভিযান শুরু হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা থেকে বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এসে পৌঁছার পর সেখানে অভিযান শুরু হয়।
এর আগে গতকাল রোববার রাতে ঢাকা থেকে একজনকে এবং ভোররাতে ফতুল্লার তক্কার মাঠের এলাকার একটি ভবন থেকে আরো দুজনকে আটক করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাঁরা স্থানীয় এবং একই পরিবারের সদস্য বলে জানিয়েছে অভিযানের নেতৃত্বে থাকা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।
আটকরা হলেন ফরিদ উদ্দিন রুমি, তাঁর স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা এবং রুমির ছোট ভাই ভাই জামাল উদ্দিন রফিক। আটক দুই ভাইয়ের বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদিন। আর ফোয়ারার বাবা অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা।
এর মধ্যে রুমি রাজধানীর আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রকৌশলী। তাঁর স্ত্রী ফোয়ারা একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। আর রফিক খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম দুপুর ১২টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল রাতে রুমিকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে ভোরে তাঁদের বাসা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এই বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতেই এই অভিযান চালানো হচ্ছে।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জানিয়েছে, যে দোতলা ভবন থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে, সেটি তাঁদের পৈতৃক বাড়ি। আর যে টিনশেড বাড়িটিতে অভিযান চলছে, সেটিও তাঁদের বাড়ি। দুই বাড়ির মধ্যে দূরত্ব আধা কিলোমিটারের মতো। আগে সেটি ভাড়া দেওয়া ছিল। পরে জঙ্গি-সংক্রান্ত কাজকর্মের জন্য ব্যবহার করা হতো।
আটক দুই ভাইকে নব্য জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলে দাবি করেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। উচ্চশিক্ষিত এই দুই ভাই হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইভার ব্যবহার করে জঙ্গি তৎপরতা চালাতেন বলে তাঁরা উল্লেখ করেছেন। ফোয়ারাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন আজ সোমবার সকালে বলেন, ‘ভোররাতে ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকার বাড়িটি ঘিরে রাখে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তার আগে তিনজনকে আটক করা হয়।’
ওসি আরো বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, ওই বাড়িতে বোমা বা বিস্ফোরক দ্রব্য থাকতে পারে।’
অভিযানের আগে সাংবাদিকদের কাছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় পুলিশের ওপর যেসব হামলা ও হামলার চেষ্টা হয়েছে এবং সেখানে যে ধরনের বিস্ফোরকদ্রব্য পাওয়া গেছে, এখানকার বিস্ফোরকের সঙ্গে তার মিল রয়েছে।
ঢাকার কাছে হওয়ায় এবং স্বল্প আয়ের জনবহুল মানুষের জঙ্গিরা আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারে। কারণ, এসব এলাকায় মানুষ একে অপরের খুব একটা খবর রাখে না। তবে এদের বিষয়ে বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি বলে জানান কাউন্টার টেররিজমের প্রধান।