ভৈরবের মেঘনায় নৌকাবাইচ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেঘনা নদীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ। নদী বাংলা সেন্টার পয়েন্ট ও এলিন ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় গতকাল শুক্রবার বিকেলে এই প্রতিযোগিতা হয়।
ভৈরব পৌরসভার তত্ত্বাবধানে নৌকাবাইচ উদযাপন কমিটির আয়োজনে মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত এক সড়ক ও দুই রেল সেতু এলাকায় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়।
কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে তালিকাভুক্ত ১৮টি নৌকা তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ওই তিন গ্রুপের প্রতিটির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করা নয়টি নৌকার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা।
বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের শ্যামপুর থেকে নৌকাবাইচে অংশগ্রহণকারী নৌকার প্রতিযোগী মাল্লারা নিজ নিজ নৌকা নিয়ে ‘সামাল সামাল সামাল, ওরে সামলে তরী বাইয়ো, হেঁইয়ো রে হেঁইয়ো’ এই ধ্বনিতে মুখর হয়ে মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত রেল ও সড়ক সেতুর ভৈরব প্রান্তে আসেন
প্রতিযোগিতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ক্ষমতাপুর গ্রামের মো. হোসেন মিয়া মাঝির দল চ্যাম্পিয়ন হয়। চ্যাম্পিয়ন দলকে পুরস্কার হিসেবে একটি ষাঁড় গরু দেওয়া হয়।
এ ছাড়া তিনটি গ্রুপের প্রথম স্থান অধিকারী বিজয়ীদের তিনটি ফ্রিজ, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে টেলিভিশন এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক নৌকার মাঝিকে সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে একটি করে স্ট্যান্ড ফ্যান উপহার দেওয়া হয়।
হেমন্তের মিষ্টিরোদ-হাওয়ায় উদ্ভাসিত হয়ে সব বয়সী নারী-পুরুষ নৌকাবাইচ দেখতে দুপুর থেকেই নদীর তীরে ভিড় জমায়। কারো চোখে-মুখে ক্লান্তির রেশটুকু পর্যন্ত ছিল না। নৌকাবাইচকে ঘিরে মেঘনা নদীর ত্রিসেতুর তীর যেন মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ পথে এ প্রতিযোগিতা দেখার জন্য উৎসাহী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উৎসব ও আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। নৌকাবাইচ উপভোগ করার জন্য ভৈরবের পাশের আশুগঞ্জ, সরাইল, নাসিরনগর, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, কটিয়াদী, রায়পুরা, বেলাব ও শিবপুর উপজেলা থেকে প্রচুর দর্শনার্থী নদীর পাড়ে ভিড় জমায়।
ভৈরব নৌকাবাইচ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও পৌরসভার মেয়র, বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আনিসুজ্জামান, ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সেন্টু, ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান, এলিন ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মাজেদ রনী, নদী বাংলা সেন্টারের পরিচালক মাহবুবুর রহমান মনির, ভৈরব প্রেসক্লাবের সভাপতি জাকির হোসেন কাজল, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম বাকী বিল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ, উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান কবির প্রমুখ।