‘আমার খুব শখ জাগছে ক্যাসিনো দেখতে, নিয়ে যাবেন?’
রাজধানীতে ৬০টি ক্যাসিনো থাকার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘আপনি অ্যারেস্ট করবেন, আমি বসে থাকব না। আপনাকেও অ্যারেস্ট হতে হবে। কারণ আপনিই প্রশ্রয় দিয়েছেন।’
রাজধানীর ফকিরেরপুল এলাকায় ইয়ংমেনস ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন ওমর ফারুক চৌধুরী।
যুবলীগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনি বলছেন ৬০টি ক্যাসিনো আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬০ জন আপনারা কি আঙুল চুষছিলেন? যে ৬০ জায়গায় ক্যাসিনো সেই ৬০ জায়গায় থানাকে অ্যারেস্ট করা হোক। সেই ৬০ জায়গায় যে র্যাব ছিল তাদেরকে অ্যারেস্ট করা হোক। আমি অন্যায় করেছি, আপনি কী করেছেন? আপনিই প্রশ্রয় দিয়েছেন। আমি জানি না, আপনিই জানেন। আমি ক্যাসিনো দেখিনি। আমার খুব শখ জাগছে ক্যাসিনো দেখতে, নিয়ে যাবেন আমাকে?’
ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘এটা শুধু নতুন বিষয় নয়। কাজ করতে গেলে ত্রুটি থাকবে। আমার ভুল নেই, সেটা আমি বলছি না। কিন্তু আপনারা কি ঘাস খেয়েছিলেন? আপনারা সবই জানতেন। এতদিন আপনারাই প্রশ্রয় দিয়েছিলেন।’
যুবলীগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘গোয়েন্দা এতই যদি তৎপর হয় তো এতদিন কী করেছেন? পত্র-পত্রিকাও যদি এতই জানেন তাহলে আপনারা এতদিন তথ্যগুলো তুলে আনেননি কেন? আমি কেন জানলাম না? আমরা কেন জানলাম না? ওহ, আপনি অতীতে জানতেন? লুকিয়ে রেখেছিলেন। কেন? সেদিনও যদি ব্যবস্থা নিতেন। আমি আমার ব্যর্থতা নেই সে কথা বলছি না। কিন্তু আমার প্রশ্ন, আপনারা কেন হঠাৎ জেগে উঠলেন? কারণটা কি? এটা কি কোনো বিরাজনীতিকরণের নীতিতে আসছেন? দলকে পঙ্গু করার কোনো ষড়যন্ত্রে আসছেন? দলকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য আসছেন?’
ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘সফলতা থাকলে ব্যর্থতা থাকবে। আমি বারবার বলছি, আমাদের ব্যর্থতা আছে। আমরা ব্যর্থতা চিহ্নিত করতে পারিনি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এখন কেন অ্যারেস্ট হবে? এতদিন কেন হলো না? আপনি তো সবই জানতেন। আপনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আপনি কি জানতেন না? নাকি আপনার সহায়তা ছিল? এখন এসব প্রশ্নগুলো আমরা তুলব। আমি অপরাধী তো আপনি এতদিন কী করেছিলেন? আমি সঠিক এটা বলছি না। আমার ভুল-ত্রুটিগুলো চিহ্নিত হচ্ছে। এতে আমার উপকার হচ্ছে।’
আজ বুধবার রাজধানীর ফকিরেরপুল এলাকার ইয়ংমেনস ক্লাব ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, গুলিস্তানে পীর ইয়েমেনি মার্কেটের পাশে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব ও বনানীতে গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান অভিযান চালায় র্যাব। এর মধ্যে ইয়ংমেনস ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে ১৪২ জনকে আটক, প্রচুর বিদেশি মদ ও সিগারেট এবং ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। আটক ১৪২ জনকে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এর আগে গুলশানের নিজ বাসা থেকে আটক করা হয় ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে।
ইয়ংমেনস ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযানের ব্যাপারে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এখানে জুয়া খেলা হতো, যা ক্যাসিনো নামে পরিচিত। তাদের কর্মকাণ্ড অনেক বেশি হওয়ায় অভিযান চালিয়ে ১৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন নারী রয়েছে।’
সারওয়ার আলম জানান, ১৪২ জনকে ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সারওয়ার আলম আরো জানান, অভিযানের সময় ক্যাসিনোতে থাকা একাধিক ব্যক্তি ‘ডাকাত’, ‘ডাকাত’ বলে চিৎকার করতে থাকে। এমনকি র্যাবের সদস্যদের হামলা করার চেষ্টা করে। পরে র্যাবের অতিরিক্ত সদস্য গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তারপর অভিযান চালানো হয়।