২৭ জনের কমিটির ২৩ জনেরই পদত্যাগ, মানিকগঞ্জ বিএনপির ক্ষোভ
মানিকগঞ্জের সদ্যঘোষিত সাতটি উপজেলা ও দুটি পৌরসভার আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির একটি অংশের নেতারা। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে শিবালয় উপজেলার কমিটির ২৭ জনের মধ্যে ২৩ জনই পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। যদিও জেলা কমিটির বর্তমান নেতৃত্বের একটি অংশ দাবি করেছে, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নেতাদের পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।
চলতি বছরের ১ মে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জামিলুর রশীদ খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান আতা ও সদস্য সচিব এস এ কবীর জিন্নাহ গত বুধবার নয়টি কমিটির অনুমোদন দেন। এসব আহ্বায়ক কমিটির প্রতিটির সদস্য সংখ্যা ২৭ জন।
কমিটি গঠনের তিন দিনের মাথায় গত শনিবার দুপুরে নবগঠিত নয়টি কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতাদের একটি অংশ মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। তাঁরা এসব কমিটি বাতিলের দাবি জানান।
এরপর শিবালয় উপজেলা কমিটির নেতারা গতকাল সোমবার জেলা নেতৃত্বের কাছে চিঠি দিয়ে একযোগে পদত্যাগ করার কথা জানান। ২৭ সদস্যের কমিটির ২৩ জনই পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। তাঁরা দলের যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগ করেন।
এ ছাড়া মানিকগঞ্জ ও সিংগাইর পৌরসভা এবং কয়েকটি উপজেলার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরাও কমিটি নিয়ে ক্ষোভের কথা জানান এই প্রতিবেদককে। কেউ কেউ ক্ষোভ ও হতাশায় পদত্যাগের কথাও বলেন।
‘পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে পকেট কমিটি’
জেলা নেতৃত্বের পক্ষ থেকে নয়টি কমিটি গঠনের পর পরই সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির একটি অংশের নেতারা। প্রেসক্লাবের এই সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন খান, আবদুল কুদ্দুস খান মজলিশ মাখন, তোজাম্মেল হক তোজা, সদস্য আবদুল বাতেন, নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ যাদু, এস এম এম ইকবাল হোসেন, অ্যাডভোকেট মেজবাউল হক মেজবা, অ্যাডভোকেট আরিফ হোসেন লিটন, অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, আব্দুল কাদের, গোলাম রফি অপুসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান আতা, যুগ্ম আহ্বায়ক মোতালেব হোসেন এবং সদস্য সচিব এস এ কবীর জিন্নাহ স্বেচ্ছাচারী কায়দায় দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তি দিয়ে নয়টি কমিটি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভার কমিটিতে এমনও ব্যক্তির নাম রয়েছে, এক যুগের বেশি সময় ধরে যাদের দলের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ছাড়া কমিটিতে সরকারি চাকরিজীবী, মাদকাসক্ত ব্যক্তিকেও রাখা হয়েছে।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জামিলুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘যাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, মূলত তাঁরাই দলে ষড়যন্ত্রকারী। তাঁরা চান না ঝিমিয়ে থাকা বিএনপি গতিশীল হোক।’
প্রতিপক্ষ সরকারদলীয় নেতাদের বিশেষ সুবিধা দিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দাবি করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বলেন, ‘এরই মধ্যে যাঁরা পদত্যাগ করেছেন, তাঁদের দলের ষড়যন্ত্রকারীরা পদত্যাগে বাধ্য করেছেন।’
‘ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি’
নবগঠিত শিবালয় উপজেলার কমিটি জেলা বিএনপির আহ্বায়কের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তাঁদের একযোগে পদত্যাগের কথা উল্লেখ করেছেন।
চিঠিতে পদত্যাগী নেতারা উল্লেখ করেন, দলের ত্যাগী, পরীক্ষিত, জেলা খাটা ও মামলার শিকার নেতাদের বঞ্চিত ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন এই উপজেলা আহ্বায়ক কমিটিতে গত সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সিল দেওয়া ব্যক্তিরাও আছেন বলে দাবি করা হয়।
এ ছাড়া কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন শিবালয় বিএনপির নেতারা।
এ ব্যাপারে শিবালয় উপজেলা বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক সত্যেন কান্ত পণ্ডিত ভজন বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে যে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে, তাতে দলের গতি ফিরে আসবে না। উল্টো দলের অভ্যন্তরে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এ কারণেই আমরা ২৩ জন একযোগে পদত্যাগ করেছি।’