চাঁদাবাজি-অস্ত্র নিয়ে অভিযোগ, ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তদন্ত করবে যুবলীগ
ঢাকা মহানগরের দুই যুবলীগ নেতার চাঁদাবাজি ও অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ।
হারুনুর রশীদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘(গত ১৪ সেপ্টেম্বর) গণভবনে আমরা উপস্থিত ছিলাম না, আর নিউজটা সূত্র ধরে করা হয়েছে। আর আমরা যেহেতু ওই মিটিংয়ে ছিলাম না এবং এখন পর্যন্ত আমাদেরকে অবহিত করা হয় নাই। বিষয়টা আমাদের কাছে জনশ্রুতির মতো। আমরাও শুনছি এবং নেত্রীর কাছ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। আমাদের তো একটা নির্দেশনা লাগবে, ওনার নির্দেশনাই আমাদের কাছে আদেশ। তবে আপনারা অতীতেও দেখছেন কারো বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ আসে আমরা তদন্ত করে শাস্তি দেব। যেহেতু বিচ্ছিন্নভাবে অভিযোগগুলো আসছে, আমরা তা আমলে নিয়ে আমাদের ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তদন্ত করব।’
যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সব দোষ শুধু ছাত্রলীগ আর যুবলীগের। বাকি সব ধোয়া তুলসি পাতা। আমি যে এত কাজ করলাম তা আজ সব শেষ হয়ে গেল। দুইটা লোক কী করল তা নিয়া সারা দেশ তোলপাড় শুরু হলো, পত্রিকার শিরোনাম হলো। কিন্তু আমি যে এত কাজ করলাম তা নিয়ে তো কেউ লিখল না। অভিযোগ আসতেই পারে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি কেউ সংগঠনের সুনাম নষ্ট করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আলোচনায় যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের কথা তোলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের আয়োজনে ঘটা করে জন্মদিন পালনে অনীহা প্রকাশ করেন এবং যুবলীগের কিছু নেতার উদ্দেশে বলেন, এরা শোভন-রাব্বানীর চেয়ে আরো খারাপ। চাঁদাবাজির টাকা বৈধ করতে মিলাদ মাহফিল করা হয়েছে। এমন মিলাদ মাহফিল আমি চাই না।
ওই সময় শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা ক্রসফায়ার থেকে বেঁচে গেছেন। আরেকজন এখনো দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। এসব বন্ধ করতে হবে। যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে বের হয়নি, অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিবাদ করেনি। যখন দলের দুঃসময় ছিল, তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে দলের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। এখন টানা তিনবার সরকারে আছি, অনেকের অনেক কিছু হয়েছে। কিন্তু আমার সেই দুর্দিনের কর্মীদের অবস্থা একই আছে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যারা অস্ত্রবাজি করে, যারা ক্যাডার পোষে, তারা সাবধান হয়ে যান। এসব বন্ধ করুন।’
তবে যুবলীগের একটি সূত্র বলছে, অভিযোগ ওঠার পর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে সংগঠনের ট্রাইব্যুনালে ডাকা হচ্ছে।
শৃঙ্খলাজনিত বিষয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যুবলীগে একটি ট্রাইব্যুনাল কমিটি রয়েছে। সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এই কমিটির প্রধান। আর ট্রাইব্যুনালে ডাকাটাই শোকজ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ রাজধানীতে সাংবাদিকদের বলেছেন, যুবলীগ নিজেরাই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করতে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। তারা নিজেরাও শোধরানোর পথ বেছে নিয়েছে। ট্রাইব্যুনালে কী হয় সেই বিষয়টি আওয়ামী লীগ পর্যবেক্ষণ করছে। তারপরেও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সেল ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।