ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার ভাগ্য নির্ধারণ আজ!
বিতর্কে জড়িয়ে পড়া ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে আজ শনিবার। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা। তবে কেমন সিদ্ধান্ত হতে পারে- এ বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেত্বত্বে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শোভন ও রাব্বানীর কর্মকাণ্ডে বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শোভন-রাব্বানীকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন। সেই রাতে শোভন-রাব্বানী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ চাইলেও পারেননি।
এর পর পরই শোভন ও রাব্বানীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ডানাপালা মেলতে থাকে। পরে শোভন ও রাব্বানী দুদিন গণবভনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও ফিরে আসেন। গণভবনে তাঁদের প্রবেশের স্থায়ী পাস বাতিল করা হয়। এর পরই আলোচনায় আসে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ।
অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চাঁদা দাবি, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদদের পদ পেতে অর্থনৈতিক লেনদেনের অডিও ফাঁস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অপেক্ষমান রাখা, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে পৌঁছানোর পর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানে যাওয়া, জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদকে বসিয়ে রাখা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের দুই মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও কমিটি না দেওয়া, কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিতর্কিত বিষয় এবং বিবাহিত ও জামায়াত-বিএনপি সংশ্লিষ্টদের পদায়ন করা, ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বাদপড়া নেতাদের সঙ্গে মধুর ক্যান্টিনে মারামারি করা, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের নতুন ভবনে ছাত্রলীগের জন্য বরাদ্দ করা ফ্লোরের বাথরুমে মাদক পাওয়ার বিষয়গুলো উঠে আসে।
এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে সর্বশেষ গত বুধবার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখেন। চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে তিনি একজন জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতার হাতে সেটি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে রাব্বানী নিজেদের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। পাশাপাশি তাদের বিষয়ে যেসব অভিযোগ এসেছে এর মধ্যে তিনটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বিস্তারিত লিখেছেন।
চিঠিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উন্নয়ন কাজ থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগ ও গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। ২০ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সম্মেলনে দেরি করে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। রাব্বানী দাবি করেন, তাঁরা বারবার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন।
অভিযোগ ওঠার পর শোভন-রাব্বানী আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের ইঙ্গিত করে এবং তাদের দোষারোপ করে গণমাধ্যমে ঢালাওভাবে বক্তব্য দেন। তারা বলেন, কেন্দ্রীয় কিছু নেতা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এবং ছাত্রলীগের সাবেক কিছু নেতা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত।
শোভন-রাব্বানীর দেওয়া এসব বক্তব্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আর এসব বিষয় আজ কার্যনির্বাহী বৈঠকে উপস্থাপন করবেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা এমনটাই জানিয়েছেন দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কার্যনির্বাহী কমিটির একাধিক সদস্য এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী ও মদদদাতাদের শোকজ এবং ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে ছাত্রলীগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করতে চান না বলে জানান। তিনি বলেন, পুরো বিষয়টা দেখবেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মাদকের বিষয়ে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একটা সাধারণ মানুষও বুঝে যে কারো যদি নেশা করতে ইচ্ছা করে, অনেক জায়গা আছে, পার্টি অফিসে কেন নেশা করবে? আমরা যখন যাই আমাদের সাথে নেতাকর্মীর বেষ্টনী দেওয়া থাকে, আমরা কি একাকি থাকতে পারি? আমাদের চারপাশে অনেক লোক থাকে। আর মদের যে বিষয়টা আসছে, মদ খেতে তো একটা পরিবেশ লাগে ভাই। মদ খেয়ে কেউ কোনো দিন সুস্থ থাকতে পারে? মাতলামি করবেই। পার্টি অফিস কি এ রকম জায়গা? নতুন পার্টি অফিসে একমাত্র আমরাই শুধু জায়গা পেয়েছি, আর কোনো সংগঠন কিন্তু পায়নি। যুবলীগ, এমন কি আওয়ামী লীগের কোনো লোক কিন্তু ওই খানে বসে নাই। বসছে শুধু ছাত্রলীগই। এ বিষয়টা নিয়ে অন্যান্যা যে অঙ্গ সংগঠনগুলো আছে সেগুলোতে একটু …ছাত্রলীগকে দিল আমাদেরকে দিল না। আরেকটি বিষয় হলো পার্টি অফিস যখন কারো আন্ডারে না থাকে, বন্ধ থাকে। তখন কিন্তু ঢাকার শহরে এ রকম একটা জায়গায় এমন একটা বিল্ডিংয়ে অনেক কিছু ঘটে আমরা শুনেছি। পার্টি অফিসের ভেতরে গুলিস্তানের যারা ব্যবসায়ী আছে, তারা বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ড করে আর কি, আড্ডা দেয়। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের যেন পার্টি অফিসটা না দেওয়া হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় এ জন্য অনেকে গেইম খেলছে।’
শোভন আরো বলেন, ‘আমাদের একটা বিশাল অংশ আছে, তারা চায় না আমরা সফল হই, সব সময় আমাদের বিতর্কিত করতে চেষ্টায় আছে সেটা বর্তমান মিডিয়া দেখলেই বুঝতে পারবেন। মিডিয়াতে ছাত্রলীগ ছাড়া কোনো কথা নাই। এমনটা হওয়ার কথা ছিল না।’
২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এরপর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।