মশার ওষুধ কেন কাজ করেনি তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে
মশার ওষুধ কেন কাজ করেনি তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য দেশেই কীট তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আজ বুধবার সন্ধ্যায় একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপকে মহামারি ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন, এমন কী ঘোষণা না দেওয়ায় সমালোচনাও করেছেন। তবে যে আকারে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে তা মহামারি ঘোষণার মতো ছিলো না বলেও জানান সংসদ নেতা। ডেঙ্গু মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ নিয়ে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, ঘর-বাড়ি ও আশেপাশে কোথাও যেন ময়লা আবর্জনা ও পানি না জমে তার দিকে নজর দিতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেও সংসদকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেঙ্গু প্রতিরোধে বাসা-বাড়ির চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সংসদ সদস্যসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যসহ দেশবাসী সবাইকেই নিজ নিজ জায়গা, ঘর এবং ঘরের আশপাশের জায়গা যাতে পরিচ্ছন্ন থাকে এবং পানি জমতে না পারে সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্মিলিতভাবে আমরা সকলে প্রচেষ্টা চালালে মানুষ সচেতন হবে। তিনি বলেন, এয়ারকন্ডিশনের পানিতে, কমোডের ঢাকনা খোলা থাকলে এবং ফ্রিজের নিচের জমে থাকা পানিতে লার্ভা জন্ম নিতে পারে, আমরা সকলে সচেতন হলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ডেঙ্গু রোগ সৃষ্টিকারী এডিস মশার লার্ভা কোথাও জমে থাকা পানি শুকিয়ে গেলেও লার্ভাটা থেকে যেতে পারে। এ অবস্থায় কয়েক সপ্তাহ জীবিত থাকে এবং পরবর্তীতে এক ফোঁটা পানি পেলে পুনরায় জীবিত হয়। এজন্য বাড়ির চারপাশ ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং কোথাও পানি জমতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, এডিস মশার একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি অপরিষ্কার পানিতে নয়, স্বচ্ছ পানিতে বংশ বিস্তার করে।
গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান আহমেদ মনসুরের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ যখন ভোট দিয়ে আমাকে প্রধানমন্ত্রী করেছে, তখন আমি যেখানেই থাকি না কেন সবসময় মনে করি জনগণের ভালমন্দ দেখাটা আমার দায়িত্ব।
শেখ হাসিনা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা ঘুমের সময় ছাড়া বাকি সময় দেশের ও জনগণের জন্য কাজ করেন। দেশের কোথায় কী হচ্ছে সেদিকে নজর রাখা তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসকারী ওষুধ ছেটানো নিয়ে সিটি করপোরেশনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, ‘ওষুধ কেনাও হয়েছে, দেওয়াও হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গুটা কেবল বাংলাদেশ নয়, আমাদের আশপাশের দেশগুলোতেও ব্যাপকহারে দেখা দিয়েছে। ফিলিপাইনে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছিল। সেখানে এক সপ্তাহে ৫০০ লোক মারা গিয়েছে এবং সে দেশে জরুরি অবস্থা পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে সেই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি তাঁর সরকার হতে দেয়নি এবং এ জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওষুধ কেনা কাটার সঙ্গে কারা দায়ী এবং ওষুধে সত্যিকারে কেন কাজ হয়নি, এর কারণ উদঘাটনে তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য রোগের ধরণটাও আগের চেয়ে বদলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এবার ডেঙ্গু রোগের ধরন পাল্টে যাওয়ায় তাঁর সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ নিয়েছে এবং যেসব দেশে এই রোগ দেখা গেছে, সে সব দেশে তারা প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সে সম্পর্কে ধারণা নিয়ে লার্ভা ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে দেশের মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।