স্পিকারকে দেবর-ভাবির চিঠি
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন- এ নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের ও কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের মধ্যে চলছে রশি টানাটানি। জি এম কাদের নিজেকে বিরোধীদলীয় নেতা বানাতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন। অপরদিকে এ চিঠি গ্রহণ না করতে রওশন এরশাদও স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন। তবে দুটি চিঠির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেননি স্পিকার।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে জাতীয় সংসদের বিরোধী নেতা করে ১৫ জন সংসদ সদস্যের সম্মতিপত্রসহ সংসদে চিঠি দিয়েছে রাজনৈতিক দলটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে পাঁচজন সংসদ সদস্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর দপ্তরে গিয়ে এই চিঠি দেন।
অপরদিকে রওশন এরশাদ আজ বুধবার স্পিকারকে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে তিনি জি এম কাদেরের চিঠি গ্রহণ না করার অনুরোধ করেন। এতে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে- কে হচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য চিঠি দেওয়ার পরের দিনই স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।
তাতে জি এম কাদেরের চিঠি গ্রহণ না করার অনুরোধ করা হয়েছে। আজ বিরোধী দলের উপনেতা রওশন এরশাদের তরফ থেকে স্পিকার বরাবর ওই চিঠি দেওয়া হয়।
এর আগে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে নিয়ে নিজ বাসায় জরুরি বৈঠক করেন বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ। আজ প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ দুই নেতা সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক। এ সময় তাঁরা অভিযোগ করেন, জি এম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নন, তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাই নিজের নাম প্রস্তাব করে চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার তাঁর নেই। একইসঙ্গে তারা জানান, জাতীয় পার্টির চলমান বিভ্রান্তি দূর করতে কাল বৃহস্পতিবার নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করবেন রওশন এরশাদ।
আর জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে গতকাল মঙ্গলবার স্পিকারকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে দলটির ২৫ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৫ জন সেই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। যদিও এ বিষয়ে জি এম কাদের কোনো কথা বলেননি।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন হবে। এর মধ্যে ১৫ জনের স্বাক্ষর নিয়ে চিঠি জমা দেন তারা।
দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘মহাত্মন, আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানাচ্ছি যে, মহান জাতীয় সংসদে বর্তমানে জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রয়েছে। আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন যে আমাদের দলের চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলের নেতা বিগত ১৪ জুলাই ২০১৯ তারিখে ইন্তেকাল করেছেন। ফলে মহান জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা পদটি বর্তমানে শূন্য রয়েছে। ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং পার্টির সংসদীয় দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যরা, বিরোধী দলের নেতা হিসেবে ১৮ লালমনিরহাট-০৩ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত আমি গোলাম মোহাম্মাদ কাদেরকে মহান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করছে।’
‘অতএব উপরোক্ত বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম এবং পার্টির সংসদীয় দলের মনোনীত সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আমাকে নিয়োগ দানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, আদেলুর রহমান, নাজমা আক্তার, শরিফুল ইসলাম ও জিন্না।
তবে রওশন এরশাদের দেওয়া চিঠি হাতে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, প্রেসিডিয়াম সভায় আলোচনা করেই চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা বানাতে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে রওশনপন্থী সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, কোনো আলোচনা ছাড়াই বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ কারণে বেগম রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে স্পিকারকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, জি এম কাদেরের চিঠির বিষয়ে যেন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয়।
স্বামী এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থায়ই স্ত্রী রওশন ও ছোট ভাই কাদেরের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। আর এর পেছনে দলের পদ-পদবি। যা সামাল দিতে দুজনের পদে নানা পরিবর্তন আনতে হয়েছিল এরশাদকে। কিন্তু এরশাদ মারা যাওয়ার পর তাদের দ্বন্দ্ব আরো প্রকট আকার ধারণ করে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর পরই প্রেসিডেন্ট ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন— সেটা নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। এক পক্ষ চাইছে জি এম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যানের পদে। আর অন্য পক্ষ চাইছে রওশন এরশাদকে।