সান্তাহার বিসিআইসি বাফার গুদামে জমাট ইউরিয়া সার নিয়ে ভোগান্তি
নওগাঁর সান্তাহারে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) বাফার গুদামে অব্যবস্থাপনা, মজুদ ও বিতরণে অনিয়মের ফলে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে প্রায় ২০ হাজার টন ইউরিয়া সার জমাট বেঁধেছে। এই সারগুলো কৃষকরা না কেনায় ডিলাররাও নিচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় সান্তাহার বিসিআইসি বাফার গুদামটি দেশের উত্তরাঞ্চলে সার সরবরাহের ট্রানজিট গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় সার মজুদের নতুন নতুন গুদাম গড়ে উঠেছে, তাই এটি আর ট্রানজিট গুদাম হিসেবে ব্যবহার করার দরকার হয় না। তবে আপৎকালীন মজুদ রাখা হয় এখানে।
নওগাঁর জেলার আট উপজেলায় নিবন্ধিত ৯৩ জন ডিলারের মাধ্যমে কৃষকের মধ্যে ইউরিয়া সরবরাহ করা হয় সান্তাহার বাফার গুদাম থেকে। চলতি মাস থেকে জেলার ১১টি উপজেলার সবগুলোতে সার সরবরাহের কথা রয়েছে।
সার ডিলাররা অভিযোগ করে বলেন, সান্তাহার গুদামটিতে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনায় ইউরিয়া মজুদ রাখায় জমাট বেঁধে শিলাখণ্ডে পরিণত হয়েছে অধিকাংশ সার। গুদামের বাইরে বিপুল পরিমাণ সার খামাল দিয়ে রাখায় সারগুলো কার্যকারিতা হারিয়েছে। সেই সারগুলো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে ডিলারদের কাছে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
নওগাঁ জেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম জানান, পুরোনো জমাট বাঁধা ইউরিয়া বিক্রি করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়েছে ডিলাররা। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার নওগাঁ জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করে তাঁরা। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গুদামের মজুদ পরিস্থিতি জানতে তদন্তে নামে প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে দেওয়া হয়। তদন্ত টিম গুদাম পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে।
নওগাঁর সান্তাহারে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) বাফার গুদামের বাইরে ফেলে রাখা ইউরিয়া সার। ছবি : এনটিভি
তদন্ত টিমের দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন সান্তাহার বাফার গুদামে কাফকো থেকে ৭২৪.৬১, শাহজালাল থেকে ৭৪৮.১৬ ও আমদানি করা ৩০ হাজার ২২০.৬৪ মেট্রিক টন সার মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার ৯৪৫.০৫ টন সার ১৮ খামালে গুদামের বাইরে খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল দিয়ে আবৃত করে রাখা হয়েছে। যার পুরোটাই জমাট বেঁধে রয়েছে। এ ছাড়া একই অবস্থা গুদামের ভেতরে রাখা প্রায় আট হাজার টন ইউরিয়া সার।
তদন্ত টিমের প্রধান ও নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, গুদামে পরিদর্শনে গেলে সারের খামালগুলো সাজানো গোছানো পাওয়া যায়নি। গুদামের বাইরের খামালে রাখা সার রোদ-বৃষ্টিতে ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন গুদামজাত থাকায় ইউরিয়াগুলো ক্রমেই গুণাগুণ হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশিদ জানান, সান্তাহার গুদামে নয় হাজার ৯০০ টন পুরোনো সার মজুদ রয়েছে। সেগুলোর একটি সুরাহা করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সমূহে জানানো হয়েছে। শিগগিরিই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সান্তাহার বাফার গুদাম ইনচার্জ হাবিবুর রহমান জানান, জমাট বাঁধলেও পুরোনো সারগুলো নষ্ট হয়নি। গুণাগুণ ঠিক আছে। তাই সারগুলো রিপ্যাকিং করা হয়েছে। নিয়ম অনুসারে সারগুলো ডিলারদের মধ্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।