মেয়ের রাজকীয় উৎসবের পর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত সেই রোহিঙ্গা ‘ডাকাত’
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে রোহিঙ্গা এক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। আজ রোববার ভোররাতে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোরা পাহাড়ের পাদদেশে এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।
নিহত রোহিঙ্গা নাগরিকের নাম নূর মোহাম্মদ। তিনি একটি সংগঠিত ডাকাত দলের নেতৃত্ব দিতেন বলে দাবি করেছেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ চন্দ্র দাশ। তিনি আরো বলেন, নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, ডাকাতি, অপহরণসহ অনেক মামলা রয়েছে এবং তিনি মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি। স্থানীয় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন নূর মোহাম্মদ।
গত ২২ আগস্ট নূর মোহাম্মদের কিশোরী মেয়ের কান ফোঁড়ানো অনুষ্ঠান হয়। বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে এই অনুষ্ঠান করা হয়। এতে আমন্ত্রিত অতিথিরা নূর মোহাম্মদের মেয়েকে এক কেজি স্বর্ণালংকার ও ৪৫ লাখ টাকাসহ আরো নানা উপহার দেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিতও হয়। এ ঘটনার নয় দিনের মাথায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেন নূর মোহাম্মদ।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘গতকাল শনিবার নূর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাতে তাঁকে নিয়ে জাদিমোরা পাহাড়ের পাদদেশে অস্ত্র নিয়ে গেলে সেখানে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে গুলি করে।’
‘এ সময় গোলাগুলিতে নূর মোহাম্মদ আহত হন এবং অন্যরা পালিয়ে যায়। পরে আহতাবস্থায় নূর মোহাম্মদকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন,’ যোগ করেন ওসি।
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিনই রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ তাঁর মেয়ের কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। এতে গরু-ছাগল জবাই করে আয়োজন করা হয় বড় ভূরিভোজ অনুষ্ঠানের। আমন্ত্রিতদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা ডাকাত, সন্ত্রাসী ও রোহিঙ্গা ইয়াবা কারবারির দল।
‘১৯৯২ সালে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ হ্নীলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জাদিমোরা এলাকায় এসে প্রথমে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে সেখানেই জমি কিনে বাড়ির মালিক হন। এ পাড়ে আশ্রয় নেওয়ার পর ওপারের রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিনি বিশাল ডাকাত বাহিনী গড়ে তোলেন,’ যোগ করেন রাশেদ মাহমুদ আলী।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ আরো জানান, রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদের বাংলাদেশে চারটি বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে একটি পাকা ভবন, একটি দোতলা, একটি টিনের ঘর এবং অপরটি বাগানবাড়ি।
পুলিশ জানায়, টেকনাফ উপজেলার জাদিমোরায় গত ২২ আগস্ট রাতে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে (৩০) গুলি করে হত্যা করা হয়। তার বড় ভাই ওসমান গণি অভিযোগ করেন, একদল রোহিঙ্গা তাঁর ভাইকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং পাশের একটি পাহাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পরে নূর মোহাম্মদকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়।
ওমর ফারুক খুনের ঘটনায় পরদিন শতাধিক বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতা একটি রোহিঙ্গা শিবিরে হামলা চালিয়ে অস্থায়ী ঘরবাড়ি ও এনজিও অফিসগুলোতে ভাঙচুর করে। তাঁরা টায়ার ও প্লাস্টিকের বাক্স জ্বালিয়ে টেকনাফ পৌরসভা থেকে লেদা পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়ক তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এ সময় রোহিঙ্গা নেতা নূর মোহাম্মদের বাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর ২৩ আগস্ট দিবাগত রাতে জাদিমোরা পাহাড়ের পাদদেশে ওমর ফারুক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই রোহিঙ্গা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। নিহতরা হলেন টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. শাহ ও আবদুর শুক্কুর।