দেশে সব ধর্মের মানুষই আজ নির্যাতনের শিকার : মির্জা ফখরুল
গণতন্ত্র না থাকায় সব ধর্মের মানুষই আজ দেশে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশে ‘ঘোরতর অমানিষা’ চলছে উল্লেখ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ঘোরতর অমানিষা চলছে। মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। আমাদের যে প্রিয় স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতার চেতনা ছিল—
যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম সেই চেতনার সব বিষয় ধ্বংস করে দিয়েছে গণতন্ত্রকে হরণ করে দিয়ে।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আজ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের আয়োজন করে বিএনপি। এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, বর্তমানে দেশে কোনো সম্প্রদায়ের মানুষেরই জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই সরকারের আমলে একদিকে গণতন্ত্রকামী মানুষ নির্যাতিত-নিপীড়িত হচ্ছে, অন্যদিকে ভিন্ন মতাবলম্বীরা নির্যাতিত হচ্ছে। আরেকদিকে বিভিন্ন ধর্মের লোকজন তারাও নির্যাতিত হয়েছেন। আমরা জানি কীভাবে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করা হয়েছে, কীভাবে তাদের নির্যাতন করা হয়েছে। আজকেই কিছুক্ষণ আগে সুশীল বাবু বললেন যে, ফেনীতে যাওয়ার পথে বৌদ্ধ পুরোহিত অমৃতা নন্দ ভিক্ষুকে হত্যা করে গোমতী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। দেখেছি যে, কীভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে নির্যাতন করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষের কল্যাণের জন্য, দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে থেকে যে আন্দোলন করছেন আজকে আমাদের সবাইকে সেই আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শরিক হতে হবে। সত্যিকার অর্থেই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই অনুষ্ঠানের শুরুটা করেছিলেন আমাদের দলের চেয়ারপারসন, ১৬ কোটি মানুষের নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে নেই। মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে এই সরকারের নির্যাতনের ফলে তিনি দীর্ঘ ১৬ মাস কারা অন্তরীণ হয়ে আছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের এ দেশে ২৬ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের এই রাষ্ট্রের এক লাখের ওপরে মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে শুধু এই অপরাধে, গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার অপরাধে। আমাদের ৫০০-এর বেশি মানুষকে গুম করে ফেলা হয়েছে, নিখোঁজ হয়ে গেছে। সেখানে হিন্দু নেই, মুসলমান নেই, বৌদ্ধ নেই, খ্রিস্টান নেই। একমাত্র তাদের অপরাধ, তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায়, তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে বিএনপির সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাশ অপুর পরিচালনায় শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ড, অপর্ণা রায় দাস, জন গোমেজ, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, নিপুণ রায় চৌধুরী, মিল্টন বৌদ্ধ, তরুণ দে, সুশীল বড়ুয়া, রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী হরিপ্রমা নন্দ মহারাজ, ইসকনের দ্বিজমনি গৌরান্দ দাস ব্রহ্মচারী প্রমুখ বক্তব্য দেন।