পাবনায় কবিরাজের ‘গুড়পড়া’ খেয়ে ইমামের মৃত্যু!
পাবনার সুজানগর উপজেলায় বাড়ির মালিকের হারানো টাকা ফেরত পেতে কবিরাজি ‘গুড়পড়া’ খেয়ে ভাড়াটিয়া এক ইমামের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে ইমাম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে দাবি করেছেন বাড়ির মালিক মামুন।
মৃত ইমামের নাম মাওলানা আবদুর রাজ্জাক। তিনি উপজেলার চরগোবিন্দপুর গ্রামের ছকির উদ্দিনের ছেলে। তিনি সুজানগর পৌর এলাকার ভবানীপুরের আব্দুল্লাহ আল মামুনের বাসায় ভাড়া থাকতেন ও স্থানীয় এক মসজিদে ইমামতি করতেন।
এ বিষয়ে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে সুজানগর থানায় মামলা করা হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল আলম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, চার থেকে পাঁচ দিন আগে বাড়ির মালিক মামুনের প্রায় তিন লাখ টাকা খোয়া যায়। এর পর তিনি বিভিন্ন লোকজনকে সন্দেহ করার পাশাপাশি বাড়ির ভাড়াটিয়া ওই ইমামকেও সন্দেহের তালিকায় রাখেন। টাকা ফিরে না পাওয়ায় শুক্রবার বিকেলে মামুন একজন কবিরাজকে ডেকে এনে সবাইকে গুড়পড়া খাওয়ান। এর পর রাতের দিকে ইমাম আবদুর রাজ্জাকের ডায়রিয়া শুরু হলে পরিবারের লোকজন তাঁকে সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে শনিবার সকালে ইমাম আবদুর রাজ্জাক মারা যান।
ওসি জানান, আবদুর রাজ্জাকের মৃত্যুর বিষয়টি বেশ জটিল। আমরা মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি। প্রতিবেদন পেলেই প্রকৃত বিষযটি বোঝা যাবে বলে জানান ওসি।
এ বিষয়ে মৃত ইমামের মামা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘মামুন টাকা না পেয়ে সন্দেহ করা ব্যক্তিদের মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন। শুক্রবার বিকেলে বাড়িতে কবিরাজ এনে মোট ১৩ জনকে গুড়পড়া খাওয়ানো হয়। কবিরাজের ভাষ্যমতে, এক ঘণ্টার মধ্যে এর ফলাফল পাওয়ার কথা। এক ঘণ্টা পর ‘এদের ভেতর কেউ টাকা নেননি’ বলে কবিরাজ ওই বাড়ি থেকে চলে যান। পরে রাতে আমার ভাগ্নে অসুস্থ হলে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করি।’’
সুজানগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সেলিম মোর্শেদ বলেন, ‘পাতলা পায়খানা ও বমি হওয়ায় রোগীটিকে আমরা চিকিৎসা সেবা দেই। মাঝরাতে রোগীর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও পরে তিনি মারা যান। ধারণা করা হচ্ছে, ইমাম সাহেব মানসিক চাপে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন।’
তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলে জানান ডা. সেলিম।
নিহত ইমামের স্ত্রী দিলরুবা খাতুন সাথী বলেন, ‘মানসিক নির্যাতনের ফলেই আমার স্বামী মারা গেছেন।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় যাঁরা জড়িত তাদের বিচার দাবি করেন তিনি।
বাড়ির মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন মানসিক নির্যাতন করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এমন গুড়পড়া অনেকেই খেয়েছেন, তাঁদের তো কিছু হলো না।’
তবে আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই কবিরাজের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর কিছুই দিতে রাজি হননি। এ ছাড়া সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিককে অনুরোধ করেন তিনি।