অভিনব প্রতারণা, সিনেমার গল্পকেও হার মানাল!
চারদিন আগে ফেসবুকে কনক জলিলের সঙ্গে পরিচয় হয় নাসিমা বেগম শিমার (২২)। আজ শুক্রবার দুজনের দেখা হয় রাজধানীর উত্তরায়। জলিল জানান, তিনি শিমাকে নিয়ে কেনাকাটা করতে চান। উবার ডেকে পান্থপথের দিকে রওনা দেন দুজন।
কারওয়ানবাজারে গিয়ে শিমাকে গাড়িতে রেখেই চম্পট দেন জলিল। সঙ্গে করে নিয়ে যান শিমা ও উবার চালক ইলিয়াস ফকিরের মোবাইল ফোন এবং নগদ চার হাজার টাকা!
আজ শুক্রবার বিকেলে ঘটে এমন অভিনব প্রতারণার ঘটনা। হতভম্ব শিমা ও ইলিয়াস ফকির কারওয়ানবাজারে বিএসইসি ভবনের সামনে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। ততক্ষণে সটকে পড়েছেন কনক জলিল। শিমা ও ইলিয়াস ফকিরের বাকবিতণ্ডা দেখে উভয়কে বিএসইসি ভবনের নিচে নিয়ে যান ভবনটির তত্ত্বাবধায়কেরা।
এনটিভি অনলাইনকে পুরো বিষয়টি জানান নাসিমা বেগম শিমা ও গাড়ির চালক ইলিয়াস ফকির।
খালা অসুস্থ, তাই টাকা লাগবে!
দেখা হওয়ার পর জলিল শিমাকে জানান, আগামীকাল শনিবার তিনি সিঙ্গাপুরে এক কনসার্টে যাবেন। তাই তার কেনাকাটা করা প্রয়োজন। শুক্রবার দুপুরে কনক জলিল রাজধানীর উত্তরা থেকে উবার ডেকে শিমাকে নিয়ে রওনা দিলেন পান্থপথের বসুন্ধরা সিটির দিকে।
কনক জলিল দুপুর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিকভাবে ২ হাজার ৩০০ টাকায় উবারের ভাড়া ঠিক করেন। চলতি পথে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় এসে সোনালী ব্যাংক খুঁজছিলেন জলিল। তিনি জানান, তাঁর খালা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খালার টাকা প্রয়োজন এবং তা পাঠাতে হবে এখনই। এটিএম বুথ পাচ্ছিলেন না বলে টাকারও ব্যবস্থা হচ্ছিল না!
জলিল জানান, তাঁর খালাকে পাঠাতে হবে ১০ হাজার টাকা। তাঁর কাছে আছে ছয় হাজার টাকা। দরকার আরো চার হাজার। জলিল ১ হাজার নেন শিমার কাছ থেকে। বাকি তিন হাজার টাকা নেন উবার চালকের কাছ থেকে। পরে কারওয়ানবাজারের বিএসইসি ভবনের পাশে প্রাইভেটকারটি রাখা হয়। শিমাকে গাড়িতে রেখেই খালাকে টাকা পাঠানোর কথা বলে গাড়ি থেকে নেমে যান জলিল।
দুই মোবাইলও লাগবে!
শিমা জানান, গাড়িতে দীর্ঘসময় শিমার মোবাইল ফোনটি জলিলের কাছেই ছিল। দুইদিন আগেই শিমা ১০ হাজার টাকা দিয়ে ফোনটি কেনেন। গাড়ির চালক ইলিয়াসের মোবাইল ফোনটিও নিয়ে নেন জলিল। তিনি গান ডাউনলোড করার নামে ইলিয়াসের ফোনটি নেন। ইলিয়াসকে জলিল জানান তাঁর ফোনে চার্জ নেই!
কনকের সঙ্গে আসা শিমা যেহেতু গাড়িতে বসে আছেন তাই ইলিয়াস ফকির তার মোবাইল ফোনটিও জলিলকে দিয়ে দেন। ইলিয়াস ফকির জানান, তাঁর মোবাইল ফোনটির দাম ১২ হাজার টাকা।
দুইটি মোবাইল ফোন ও নগদ চার হাজার টাকা নিয়ে জলিল গাড়ি থেকে নেমে যান। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও জলিলের দেখা পাননি শিমা ও ইলিয়াস ফকির।
জলিলের খোঁজ না পেয়ে গাড়ির চালক ইলিয়াস শিমার কাছে মোবাইল ফোন ও টাকা ফেরত চান। আর ওদিকে শিমা গাড়ির চালককে দোষারোপ করতে থাকেন।
অতঃপর তিনি গায়েব!
বিএসইসি ভবনের তত্ত্বাবধায়কেরা শিমা ও ইলিয়াসকে ডেকে ভবনের ভেতরে নিয়ে যান। পরে শিমা কান্নাকাটি করে বিষয়টি তাঁর বাবা-ভাইকে ফোন করে জানান। এদিকে ইলিয়াস ফকির ৯৯৯ ফোন করেন। এতে তেজগাঁও থানা থেকে হেদায়েত নামের একজন উপপরিদর্শক (এসআই) যান ঘটনাস্থলে। সন্ধ্যার পর শিমার পরিবারের লোকজনও আসেন।
নাসিমা বেগম শিমা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘চারদিন আগে ফেসবুকে কনকের সঙ্গে পরিচয় আমার। কনক আমাকে বলেছিল সে শিল্পী। তার ফেসবুকে অনেক শিল্পীর সঙ্গে ছবিও দেখেছি। আমার সঙ্গে নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন অনন্ত জলিলের চাচাতো ভাই বলে। আমাকে বলেছিল, আগামীকাল সে সিঙ্গাপুর যাবে একটি কনসার্টে অংশ নিতে। তাই আজ যাচ্ছিলাম বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে। এর ভেতরে আমার সাথে এসব ঘটে গেল। আমি সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি আর ঢাকাতে থাকব না। এই ঢাকা ভালো না।’
শিমা আরো বলেন, ‘ফেসবুকে তার সঙ্গে পরিচয় হলে সে আমাকে বোন ডেকেছিল। তুই-তোকারি করে কথা বলতো। আমি তার কাছে একটা চাকরি চেয়েছিলাম। সে বলেছিল দিবে। আজ চাকরি নিয়ে কথা বলবে বলে সে আমাকে জানিয়েছিল। তাই সে আমাকে বের হতে বলেছিল। এখন ফোন টাকা সব নিয়ে যাওয়ার পর তার ফেসবুক আইডিও পাচ্ছি না। ফোন নম্বরও বন্ধ।আমি ভাবতেই পারিনি সে ছিনতাইকারী!’
এদিকে উবার চালক মো. ইলিয়াস ফকির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘লোকটি আমাকে অনলাইনে কল দেন। এরপর এসে চুক্তিভিত্তিকভাবে রাত নটা পর্যন্ত কনটাক করেন। ভাড়া পাকা হয় ২ হাজার ৩০০ টাকায়। টাকা চাইল টাকা দিলাম। ফোনও দিলাম। কারণ তার সঙ্গের মেয়েটি আমার গাড়িতে আছে। আবার তারা গাড়ির পিছনে বসে তুই তুই বলে কথা বলছিল। আমি তো কোনো ভাবেই ভাবিনি, সমস্যা হবে। এরপর তো তার কোনো খোঁজ নেই। ফোনও বন্ধ। মেয়েটাও কান্নাকাটি করতেছে। এরকম ঘটনা জীবনে আমার সঙ্গে ঘটেনি। আমার ১২হাজার টাকার ফোন গেল। ৩ হাজার টাকা গেল। আর ভাড়ার কথা তো বাদই দিলাম।’