ইলিশে সয়লাব চাঁদপুরের বাজার
চাঁদপুর জেলা শহর ও উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে দেখা যাচ্ছে ইলিশের প্রচুর আমদানি। আর দামও নাগালের মধ্যে ।
বড় রেলওয়ে স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর ইলিশ আসছে দক্ষিণাঞ্চল থেকে। লোকজনের রয়েছে প্রচুর হাঁকডাক। দৈনিক শত শত মণ ইলিশ আসছে এ ঘাটে। অল্প কিছু চিংড়ি ছাড়া অন্য কোনো মাছ নেই এখানে।
প্রবীণ ইলিশ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম (৫৮) জানান, ঈদের পর থেকেই এখানে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় সহজেই মাছ আসছে এখানে। এখন পুরো মাছঘাট কর্মচঞ্চল। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাছঘাট থাকে ব্যস্ত।
তবে ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, এখনো চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ ১০ ভাগও পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ পদ্মার ইলিশের স্বাদই আলাদা। দামও তাই বেশি। এক কেজি ওজনের পদ্মার একটি ইলিশ কেজি ৯০০ টাকা। পক্ষান্তরে, একই ওজনের হাতিয়ার সমুদ্রের ইলিশ ৭০০ টাকা। দুই কেজি ও আড়াই কেজি ওজনের ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে। এসব ইলিশ দুই হাজার থেকে দুই হাজার ১০০ টাকা প্রতি কেজি দরে এ ঘাটে বিক্রি হচ্ছে।
চাঁদপুর পাওয়ার হাউসের প্রকৌশলী তোসাদ্দেক হোসেন জানান, তিনি দুই কেজি ওজনের ইলিশ কিনেছেন দুই হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে।
ইলিশ মাছের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ঘাটে ইলিশ-ফকিরের আনাগোনাও বেড়েছে। বাতিল হওয়া ইলিশ মাছ গরিব-দুস্থ ও পুরাণবাজারের বউবাজারের নারী ব্যবসায়ীদের স্বামীরা কিনে নেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশির ভাগ ইলিশ আসে হাতিয়া, সন্দ্বীপ, ঢালচর, বরগুনা, নিঝুম দ্বীপ, চরফ্যাসন, পাথরঘাটা ও ভোলা থেকে। মাঝারি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা।
আমদানি হওয়া বেশির ভাগ ইলিশ আসে হাতিয়া ও তার আশপাশের সমুদ্র এলাকা থেকে। হাতিয়া থেকে ট্রাকে বা পিকআপে চাঁদপুর আসতে সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। এতে খরচও কম, ঝামেলাও কম বলে জানান চালক এনামুল হক ও তাঁর সহযোগী রফিক।
চাঁদপুরের বাইরে ট্রাকযোগে সরাসরি সিলেট, হবিগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, ঢাকার কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, আবদুল্লাহপুর, আজমপুর, বাইপাইল, টঙ্গী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহে এসব মাছ সরবরাহ করা হয়।
ইলিশের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এ ঘাটে প্রায় আটশ-নয়শ দিনমজুর খুব ব্যস্ত। দিনমজুর সিরাজ, ফারুক ও সালাম জানান, এখন তাঁদের কথা বলারও সময় নেই। তাঁরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজে ব্যস্ত।
জেলা শহরের নতুন বাজার, পুরাণবাজার, পালবাজার, বিপণিবাগ, ওয়্যারলেস বাজার, আনন্দবাজার, বাবুরহাট বাজার ও মতলবের বিভিন্ন হাটবাজারে, হাজীগঞ্জ সদরে, ওয়ারুক বাজার, শাহরাস্তির সুচিপাড়া, বেরনাইয়া বাজারে, মেহার কালীবাড়ি এলাকায়, ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন বাজারেও বরফে ঢাকা ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের প্রচুর ইলিশের আমদানি দেখা যায়।
বড় রেলওয়ে স্টেশনের হোটেলগুলোর আশপাশ দিয়ে হাঁটলেও এ সুস্বাদু টাটকা ইলিশের ঘ্রাণ নাকে-মুখে আসে। আর সে জন্যই চাঁদপুরকে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নাম দেওয়া হয়েছে। ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চাঁদপুর জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটির সভায় এ কথা জানান তৎকালীন জেলা প্রশাসক আ. সবুর মণ্ডল।
তিনি বলেন, চাঁদপুর জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ‘চাঁদপুর সিটি অব হিলশা’র যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাতে ‘ইলিশের শহর চাঁদপুর’ না করে চাঁদপুরের কৃতী সন্তান চিত্রশিল্পী হাশেম খান ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ রাখার পরামর্শ দেন।
এ নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি না হয়, সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচরে আনলে তিনিও ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’কেই সরকারিভাবে অনুমোদন দেন। সে কারণে বর্তমানে চাঁদপুরের সর্বত্র ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ লোগো ব্যবহার শুরু হয়েছে। জেলা শহরের মোহনা এলাকায় পর্য়টন কেন্দ্রের চত্বরে ইলিশের একটি প্রতিকৃতিও স্থাপন করা হয়েছে, যা আগন্তুক সবাইকে মুগ্ধ করে।