২১ আগস্ট লাশের গাড়িতে থাকা নাসিমা এখন কেমন আছেন?
‘সেদিন গ্রেনেড হামলায় আহত, রক্তাক্ত হই আমি। আমাকে মৃত মনে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশের গাড়িতে করে নিয়ে মর্গে ফেলে রাখা হয়েছিল। পরে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর দেখতে পাই আমি মর্গে অন্য লাশের পাশে। এরপর চিকিৎসা শুরু হলে ধীরে ধীরে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠি। কিন্তু শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা পিছু ছাড়েনি আমার। চিকিৎসকরা বলেছেন, যত দিন জীবিত আছি, তত দিন এই যন্ত্রণা আমাকে পোহাতে হবে। এখন মনে হয় সেদিন মরে যাওয়াই ভালো ছিল।’
কথাগুলো বলছিলেন ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়া নাসিমা ফেরদৌসী। তাঁর শরীরে এখনো গ্রেনেডের অসংখ্য স্প্লিন্টার। সেই স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে। হামলার সময় নাসিমা ফেরদৌসী ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগে সহসম্পাদিকার দায়িত্বে রয়েছেন।
নাসিমা ফেরদৌসী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নেত্রী বেঁচে ছিলেন বলেই আমি আজ বেঁচে আছি। নেত্রী সেই দিন মৃত্যুর কূপ থেকে বেঁচে আমাদের বাঁচিয়েছেন। মরেও বেঁচে আছি। হয়তো মরে গেলে বেঁচে যেতাম। শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে থাকার যে কী যন্ত্রণা তা আমরাই বুঝি। কী অপরাধ ছিল আমাদের? আমরা কী করেছি? জাতির পিতার কন্যার ডাকে সাড়া দিয়ে সেদিন সমাবেশে যাওয়া কি আমাদের অপরাধ ছিল? আজও আমরা তার পূর্ণ বিচার পাইনি। আমরা চাই, আদালতের রায় কার্যকর করা হোক।’
শুধু নাসিমা ফেরদৌসী নন, এমন শতাধিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা শরীরে বয়ে চলেছেন দিনের পর দিন, বছরের পর বছর।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবাদবিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সে সময়ের বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা। অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে বক্তব্য শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে একের পর এক গ্রেনেড ছোড়া হয়। উপর্যুপরি ১৩টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণে মুহূর্তেই সমাবেশস্থল পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন অল্পের জন্য এই ভয়াবহ হামলা থেকে বেঁচে গেলেও মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেগম আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত হন। এ ছাড়া এই হামলায় আরো ৪০০ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।
গ্রেনেড হামলায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা). মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন ও ইসাহাক মিয়া।
মারাত্মক আহতরা হলেন শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা পারভীন, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌসী, শাহানারা ইয়াসমিন, শাহিদা তারেক দীপ্তি, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক, জোবায়দুল হক রাসেল প্রমুখ।