ফিল্মি স্টাইলে কারাবন্দি আমিরকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল জঙ্গিরা
রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে একটি জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাসহ চার সদস্যকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের মিডিয়া সেন্টারে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরানুল হাসান এই তথ্য জানান।
আটককৃতরা হলেন, ইব্রাহিম আহমেদ হিরো (৪৬), আবদুল আজিজ (৫০), মো. শফিকুল ইসলাম সুরুজ (৩৮) এবং মো. রশিদুল ইসলাম (২৮)। তাঁরা ‘আল্লাহর সরকার’ বা ‘আল্লার দল’-এর সদস্য।
ইমরানুল হাসান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা ‘আল্লাহর সরকার’-এর সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁরা নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা নানা ধরনের চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জঙ্গি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে। সংগঠনটির আমির (যাকে তারকা নামেও ডাকা হয়) জঙ্গি মতিন মেহেদীর নেতৃত্বে তখন দলটির নামকরণ করা হয় ‘আল্লাহর দল’। পরবর্তী সময়ে তারা জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সঙ্গে একীভূত হয়। সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার পর যখন জেএমবির জঙ্গিরা একে একে গ্রেপ্তার হয়, তখন মতিন মেহেদী তাঁর অধীনস্থদের নিয়ে জেএমবি ত্যাগ করেন।
পরে মতিনের নেতৃত্বে আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে জঙ্গিরা। ২০০৭ সালে মতিন মেহেদী গ্রেপ্তার হন। এখনো মতিনকেই সংগঠনটির আমির বা তারকা মানা হয়। মতিনের গ্রেপ্তারের পর থেকে এই সংঘটনটির পরিচালনা করছেন ভারপ্রাপ্ত আমির ইব্রাহিম আহমেদ হিরো। কৌশলগত কারণে ২০১৪ সালে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে ‘আল্লাহর সরকার’ নামকরণ করা হয়।
ইমরানুল হাসান বলেন, ‘এই সংঘটনের সদস্যরা মনে করেন বর্তমান পরিস্থিতিটা একটা যুদ্ধাবস্থা। তাই তাঁরা ঈদ, কোরবানি এবং হজ পালন করেন না। তাঁরা জামাতেও নামাজ আদায় করেন না। প্রতি ওয়াক্তের নামাজ দুই রাকাত করে আদায় করেন। তবে তাঁরা মাসভিত্তিক যাকাত প্রদান করেন। এই যাকাতের টাকা তাঁরা সংগঠনের কাজে ব্যবহার করেন।’
র্যাব ৩-এর অধিনায়ক আরো বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, ফিল্মি স্টাইলে তাঁরা তাদের গ্রেপ্তারকৃত আমির জঙ্গি মতিন মেহেদীকে কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা করছিলেন। গ্রেপ্তারকৃতদের ভেতরে ভারপ্রাপ্ত আমির ইব্রাহিম আহমেদ হিরো জানিয়েছেন, তিনি তাদের সংগঠন আল্লাহর সরকারের অধিনায়ক হিসেবে কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৭ সালে ভাগিনা মাহমুদের মাধ্যমে এই সংগঠনে প্রবেশ করেন। তিনি মতিন মেহেদীর কাছ থেকে সরাসরি বায়াতপ্রাপ্ত। এই সংগঠনের কার্যক্রম মূলত পাবনা জেলা থেকে শুরু হয় বলেও জানান ইব্রাহিম। তিনি এসএসসি পাস করেছেন।’
ইমরানুল হাসান আরো বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল আজিজ জানান, তিনি গাইবান্দার একটি কলেজ থেকে থেকে বিকম সম্পন্ন করেছেন। আজিজ ১৯৯৭ সালে মতিন মেহেদীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে প্রবেশ করেন এবং বায়াত গ্রহণ করেন। এ ছাড়া শফিকুল ইসলাম সুরুজ জানান, তিনিও এসএসসি পাস করেছেন। শফিকুল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা জেলার নায়ক হিসেবে কাজ শুরু করেন। অপর জঙ্গি রশিদুল ইসলাম জানান, তিনি ইব্রাহিম আহমেদ হিরোর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান। গত চার বছর ধরে তিনি কুড়িগ্রাম জেলার নায়ক হিসেবে কাজ করছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে অধিনায়ক আরো বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত তাঁরা কোনো হামলায় অংশ নিয়েছেন কি না, তা তদন্ত না করে বলা যাবে না। তবে তাঁরা পরিকল্পনা করছিলেন হামলার।’
‘আটককালে তাদের কাছ থেকে অনেক মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, পেনড্রাইভ ও আর্থিক সংক্রান্ত নানা বই পাওয়া যায়। অনেক ব্যাংকে নামে-বেনামে তাদের সম্পতি রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন’, যোগ করেন র্যাব কর্মকর্তা।